কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও সালোকসংশ্লেষ

কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও সালোকসংশ্লেষ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

উদ্ভিদ কোষের নিশ্বাস-প্রশ্বাস এবং শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ইলেকট্রনের লেনদেন একটি বিশেষ জরুরি প্রক্রিয়া। কিন্তু এর জন্য যেসব কোয়ান্টাম আন্তঃক্রিয়া চলে সেগুলি অতিরিক্ত জটিল। এগুলিকে কম্পিউটারে অনুকরণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে হিমশিম খাচ্ছিলেন। বর্তমানে চালু কম্পিউটার প্রকৌশলের সাহায্যে কিছুতেই একাজ করা যাচ্ছিল না। কিন্তু এবার আমেরিকার রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল একটা নতুন কোয়ান্টাম সিস্টেম বানাতে সমর্থ হয়েছেন। সেটিকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যায় যাতে তা স্বাধীনভাবে ইলেকট্রন লেনদেনের কতকগুলি মূল ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। যেমন দাতা ইলেকট্রন ও গ্রহীতা ইলেকট্রনের শক্তি-ব্যবধান, ইলেকট্রনিক ও ‘ভাইব্রনিক’ সংযুক্তি এবং পরিবেশে বিচ্ছুরণ। ভাইব্রনিক মানে হল অণুর স্পন্দন-শক্তি আর ইলেকট্রনিক শক্তির অনুপাত। এর জন্য তাঁরা একটা ‘আয়ন কেলাস’কে একটি ভ্যাকুয়াম সিস্টেমের মধ্যে বন্দি করে ফেলে তার মধ্যে লেজার আলো ফেলেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, এই সিস্টেম কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ‘স্পিন গতিশীলতা’র ক্রিয়া নকল করে দেখাতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ইলেকট্রনের লেনদেন কী হারে সম্পন্ন হয় সেটাও মাপতে সক্ষম। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আর জীববিজ্ঞানের বিজ্ঞানীরা এ প্রকল্পে একযোগে কাজ করেছেন। তাঁদের এই পরীক্ষার ফল শুধু যে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের মূল তত্ত্বগুলির সত্যতা যাচাই করেছে তাই নয়, আলোকসঞ্চয় (লাইট হার্ভেস্টিং) নামক প্রক্রিয়া বিষয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে। এই আলোকসঞ্চয় (লাইট হার্ভেস্টিং) হল সালোকসংশ্লেষের প্রথম ধাপ। এই ধাপে সূর্যের আলো ইলেকট্রনের উদ্দীপনায় রূপান্তরিত হয়, যা আধান (চার্জ) আলাদা করার প্রক্রিয়াকে উসকে দেয়। এছাড়া অণুভিত্তিক কৌশলগুলি সম্পর্কে অভিনব অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে এই পরীক্ষা। “এই প্রথম একটি ভৌত যান্ত্রিক কৌশলে এমন একটি মডেলের ক্রিয়া অনুকরণ করা গেল যাতে পরিবেশের ভূমিকা বজায় রইল, এমনকি সে-ভূমিকাকে প্রয়োজনমতো নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব হল। কম্পিউটারে কোনো প্রক্রিয়া অনুকরণের (সিমুলেশন) কোয়ান্টাম পদ্ধতির ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। প্রক্রিয়া অনুকরণের এই পদ্ধতির সাহায্যে রসায়ন আর জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কিছু মডেল আর নিয়ন্ত্রিত বিন্যাস নিয়ে অনুসন্ধান চালানো যাবে’। এর সম্ভাবনা প্রচুর। নবীকরণযোগ্য শক্তি-প্রযুক্তি, আণবিক ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার শাস্ত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য নতুন মালমশলা তৈরি ক্ষেত্রেও পথ দেখাতে পারে এ গবেষণা। এছাড়া সালোকসংশ্লেষের মতো প্রক্রিয়ায় শক্তি পরিবহণকে কোয়ান্টাম ক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত করে সে বিষয়েও গভীরতর উপলব্ধিতে পৌঁছনে যাবে। আরো ভালো করে আলো সঞ্চয় করতে সক্ষম নতুন নতুন পদার্থ বানানোর পথও খুলে দেবে। অদূর ভবিষ্যতে সালোকসংশ্লেষের সঙ্গে এবং আধান পরিবহণের সঙ্গে জড়িত আরও জটিল আণবিক সিস্টেম নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে গবেষক-দলের।
সূত্র: ScienceDaily, 20 December 2024.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 7 =