সুনামির একুশ বছরঃ আমাদের শিক্ষা

সুনামির একুশ বছরঃ আমাদের শিক্ষা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ জানুয়ারী, ২০২৫

এখন যাঁদের বয়স তিরিশের ওপরে, তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে আজ থেকে একুশ বছর আগে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরের সেই বীভৎস বিপর্যয়ের কথা, যার নাম সুনামি। ইতিহাসে এতবড়ো ভূমিকম্প মাপার দুর্ভাগ্য বিজ্ঞানীদের খুব বেশি ঘটেনি। দুনিয়া জুড়ে দু লক্ষেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছিল, নষ্ট হয়েছিল বিপুল সম্পত্তি। এই সুনামির ভালো নাম ‘দ্য আন্ডার-সি মেগাথ্রাস্ট আর্থকুয়েক’ কিংবা সংক্ষেপে ‘সুমাত্রা-আন্দামান’ ভূমিকম্প। রিখটার মানদণ্ডে এর তীব্রতার মাত্রা ছিল ৯.১ থেকে ৯.৩। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা আর থাইল্যান্ড প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সুমাত্রার প্রায় ১৬০ কিমি দূরে সমুদ্রতলের ৩০ কিমি গভীরে ভূমিকম্পটি হয়েছিল। কী ঠিক ঘটেছিল? একদিকে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান টেকটোনিক প্লেট আর অন্যদিকে আকারে অপেক্ষাকৃত ছোটো বার্মা মাইক্রোপ্লেটের মধ্যে মহা-সংঘর্ষ হয়েছিল। ক্ষীণতর বার্মা প্লেটের তলায় তলায় গুরুভার ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটটি বছরে ৬ সেন্টিমিটার হারে সরে সরে যাচ্ছিল। ফলে দশকের পর দশক ধরে একটা ফাঁক বা বিচ্যুতিরেখা বরাবর চাপ বাড়ছিল। সেই চাপ বাড়তে বারতে শেষ পর্যন্ত আকস্মিক এক ভয়ংকর ফাটলের রূপ ধরেছিল। এই ফাটল ১২০০ থেকে ১৩০০ কিলমিটার পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। এর আগে কখনো এত দীর্ঘ ফাটল দেখা যায়নি। কঠিন শিলা দিয়ে তৈরি টেকটোনিক প্লেটগুলো যেমন যেমন সরে যাচ্ছিল তারই সঙ্গে তাল রেখে সমুদ্রতলের মেঝে হুহু করে বেশ কয়েক মিটার ফেঁপে উঠল। সমুদ্রতলের মেঝেটি খাড়াখাড়িভাবে উঠে আসায় একটা বিপুল পরিমাণ জল ঠেলে ওপরে চলে এল। তার পরিমাণ নাকি এক লক্ষ কোটি টন! ফলে জেগে ওঠে প্রচণ্ড জোরালো ঢেউ। তার বেগ উচ্চতম মাত্রায় ঘণ্টায় ৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল। এইসব ঢেউ ভূমিকম্পের পরিকেন্দ্র থেকে সব অভিমুখে পরিধির দিকে ছড়াতে ছড়াতে কয়েক মিনিটের মধ্যে কূলে পৌঁছে যায়। সুনামির ৯ মিটার উঁচু ঢেউ ঢেউ সবার আগে আঘাত করে ইন্দোনেশিয়ার ‘বান্দা আছে’ নামক দ্বীপকে। আগে থেকে সাবধান করে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সেখানকার লোকজন হতচকিত হয়ে পড়ে। শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সুনামি এতই জোরালো ছিল যে তার ধাক্কা গিয়ে লাগে সুদূর পূর্ব আফ্রিকায়। ভারতে আনুমানিক ১০ হাজার ৭৪৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, জখম হয়েছিলেন ৫ হাজার ৬৪০ জন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আন্দামান আর নিকোবর। তামিল নাড়ু, পশ্চিম বাংলাতেও এর প্রভাব অনুভূত হয়েছিল। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ২ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে একটা শিক্ষা নেওয়ার আছে। সে হল, সারা বিশ্ব জুড়ে ভূমিকম্প শনাক্তকরণ ও সতর্কতা জারি করার এবং বিপর্যয় মোকাবিলার উন্নত ব্যবস্থা জারি রাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 4 =