দূর-দূরান্তে ভ্রমণের জন্য পাখিরা বিখ্যাত, তারা আকাশে আধিপত্য বিস্তার করলেও বাদুড়ও কিছুটা কৃতিত্বের দাবিদার। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং আফ্রিকা মহাদেশে এই স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কিছু প্রজাতি হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। বাদুড়ের এই বিরল, অধরা আচরণ দীর্ঘকাল বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করেছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিমাল বিহেভিয়ার (এমপিআই-এবি) এর গবেষকরা সম্প্রতি ইউরোপ জুড়ে বসন্তে অভিবাসনের সময় ৭১ টা সাধারণ নকটিউল বাদুড়ের গতিবিধি অধ্যয়ন করেছেন। পোস্টডক্টরাল গবেষক এবং কনস্টানজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস্টার অফ এক্সিলেন্স কালেকটিভ বিহেভিয়ার- এর এডওয়ার্ড হার্ম জানিয়েছেন, বাদুড় যে পথে গেছে, তার সঙ্গে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় পরিবেশে তারা কী অনুভব করেছিল তাও দেখা হয়েছে। তাদের গবেষণা সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।
আনুমানিক ১৬০০ কিলোমিটার জুড়ে নকটিউল বাদুড়ের অভিবাসন দেখা হয়েছিল। এই গবেষণার জন্য এমপিআই – এবি-র প্রকৌশলীরা বাদুড়ের শরীরের ভরের মাত্র ৫% ওজনের ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার করেন। এগুলো বাদুড়ের কার্যকলাপের মাত্রা আর বায়ুর তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য একাধিক সেন্সরযুক্ত। প্রচলিত ট্র্যাকারগলো থেকে তথ্য পুনরুদ্ধার করার জন্য কাছাকাছি থাকা প্রয়োজন, কিন্তু এই ট্যাগগুলো ১৪৪০ টা দৈনিক সেন্সর রিডিংকে সংকুচিত করে ১২-বাইট বার্তায় নিয়ে আসে। এই তথ্য এক অভিনব দীর্ঘ-পরিসীমাযুক্ত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়, যা ইউরোপের যেকোনো স্থান থেকে রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণ করা যায়। বাদুড় যেখানেই থাকুক না কেন ট্যাগগুলোর সাহায্যে গবেষকরা তাদের নজরে রাখতে পারেন, কারণ পুরো ইউরোপ জুড়ে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে বলে জানিয়েছেন টিম ওয়াইল্ড, যিনি এমপিআই-এবি-র সেন্সর নেটওয়ার্ক গ্রুপে ICARUS-TinyFoxBatt ট্যাগ তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গবেষকরা দীর্ঘ পরিযায়ী ওড়া থেকে কয়েক ঘন্টাব্যাপী ওড়া আলাদা করার জন্য তথ্য বেছে দেখেছেন যে নকটিউল বাদুড় এক রাতে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার স্থানান্তরে যেতে পারে। বাদুড়দের পরিযায়ী অবস্থায় ওড়ার সময় ঘন ঘন থামতে হয়, সম্ভবত তাদের খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। পরিযায়ী পাখিদের মতো বাদুড়রা অভিবাসনের প্রস্তুতি হিসেবে ওজন বাড়ায় না। তাদের প্রতি রাতে শক্তি জোগাড়ের জন্য খাবারের প্রয়োজন পড়ে, তাই তারা একটানা অভিবাসনের পরিবর্তে থেমে থেমে চলে। গবেষকরা হঠাৎ এক আকর্ষণীয় প্যাটার্ন দেখতে পান। কোনো কোনো রাতে, বিস্ফোরণের মতো বাদুড়রা উড়তে থাকে। সেই নির্দিষ্ট রাতে সমস্ত বাদুড়দের কেন এই প্রতিক্রিয়া হয়, তা দেখতে গিয়ে দেখেন, এর সাথে আবহাওয়ার পরিবর্তনের যোগ রয়েছে। বাতাসের চাপ কমে গেলে আর তাপমাত্রা বাড়লে বাদুড় রাতে উড়ে চলে যায়। মানে আগত ঝড়ের আগে বাদুড় উড়ে চলে যায়। তারা ঝড়ের আগে গরম হাওয়ার সমর্থনে উড়ে চলে যায়। ট্যাগের সেন্সর থেকে বোঝ আযায়, বাদুড়রা এই উষ্ণ বাতাসের রাতে উড়তে কম শক্তি ব্যবহার করে। এই ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণী তাদের ওড়ার শক্তি পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করে। পরিযায়ী বাদুড় মানুষের জন্য হুমকির সম্মুখীন, বিশেষ করে বায়ু টারবাইনে তাদের ঘন ঘন সংঘর্ষ হয়। হার্ম বলেছেন, এই গবেষণার আগে, জানা ছিল না বাদুড়রা কখন, কেন স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। এখন বাদুড়দের ওড়ার সময় বায়ু টারবাইন বন্ধ করে তাদের সহায়তা করা সম্ভব।