চরম অতিবেগুণি আলোক-স্পন্দর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম সিস্টেমকে কৌশলে কাজে লাগাতে পেরেছেন। পরমাণুর কাঠামো আর কোয়ান্টাম দশাকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। ইতালির ইলেত্রা সিংক্রোটন-এ তাঁরা এ পদ্ধতি প্রদর্শন করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, অতিবেগুণি আলোর অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে বস্তুকে অতিদ্রুত সময়পর্বে তার পারমাণবিক স্তরে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর ফলে রাসায়নিক প্রক্রিয়াদি এবং ঔষধ-নির্মাণ শিল্পে বিপ্লব ঘটতে পারে। ফ্রেইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুকাস ব্রুডার চোদ্দোটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সঙ্গে কাজ করে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। হিলিয়াম অণুর ওপর এই পদ্ধতির পরীক্ষা সার্থক হয়েছে। গবেষকরা হিলিয়াম অণুর ইলেকট্রনের শক্তিমাত্রায় বদল আনেন এবং তার ফলে ইলেকট্রনের চলনে যে-পরিবর্তন এল তা অতি নিপুণভাবে মাপতে সমর্থ হয়েছেন। আগে কখনো এটা এত নিপুণভাবে মাপা সম্ভব হয়নি। পরমাণুর আচরণকে বদলানোর জন্য তাঁরা অতিবেগুণি আলোর অতিক্ষুদ্র স্পন্দগুলির বিস্তার (অ্যামপ্লিচুড), দশা (ফেজ) আর মেরুকরণ (পোলারাইজেশন) প্রয়োজন অনুসারে গড়ে নিতে পেরেছেন। এত নিপুণ মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হওয়ার ফলে নির্বাচিত কয়েকটি কোয়ান্টাম প্রক্রিয়াকে যেমন বাড়িয়ে তোলা গেছে, তেমনি আবার কয়েকটিকে কমিয়ে দেওয়া গেছে। ত্রিয়েস্তের ইলেত্রা সিংক্রোটনে ফের্মি মুক্ত-ইলেকট্রন লেজার কেন্দ্রে এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এটি ইতালির অন্যতম অগ্রসর গবেষণা কেন্দ্র। এই গবেষক দলের সদস্য ড. ক্রিস্তিয়ান মানজোনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘যাকে বলা হয় “সুসংহত নিয়ন্ত্রণ” সেই প্রক্রিয়াটিকে আমরা বর্ণালীর অতিবেগুণি আর এক্স-রশ্মির এলাকায় প্রসারিত করতে পেরেছি। সুসংহত নিয়ন্ত্রণের জন্য আলোকে কাজে লাগিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার বিকাশকে বদলে নিয়ে, বাঞ্ছিত রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদনের লক্ষ্যে চালিত করতে হয়’। পদার্থবিদ অধ্যাপক গিউলিও চেরুল্লো জানান, ‘এই প্রক্রিয়াটি মূলত পদার্থবিজ্ঞানের পরিণতি। এর ফলে আলোকে বিকারক হিসাবে ব্যবহার করে কোয়ান্টাম বিক্রিয়ার নৈপুণ্য বাড়ানো যাবে। এর সুবাদে অতি বিশেষীভূত অণু উৎপাদন করা যাবে, যা ঔষধ-নির্মাণ প্রভৃতি শিল্পে সুপটুভাবে প্রয়োগ করা যাবে’।
সূত্র : Nature volume 636, pages337–341 (2024) DOI: 10.1038/s41586-024-08209-Y