আমাদের শারীরিক প্রক্রিয়া ঘুমের মধ্যে বন্ধ থাকে। মস্তিষ্ক কিন্তু তখনও কাজে ব্যস্ত থাকে, সারাদিনের কাজের রেকর্ডিং যথাযথ স্থানে রাখে আর অতীতের অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে সেগুলো বোঝে। পুরানো স্মৃতিকে না সরিয়ে কীভাবে নতুন স্মৃতি মস্তিষ্ক প্রক্রিয়া করে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। আমাদের ঘুমের সময় কীভাবে আমাদের স্মৃতি আলাদা আলাদাভাবে থাকে বিজ্ঞানীরা তার বিভিন্ন পদ্ধতি অনুমান করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ব্রেন-স্ক্যানিং ইলেক্ট্রোড আর ছোটো আই-ট্র্যাকিং ক্যামেরা ইঁদুরে বেঁধে, তাদের ওপর নজরদারি করেছেন। ইঁদুররা দিনে কোন নতুন কাজ শিখেছে, যেমন একটা গোলকধাঁধায় পথ খোঁজা আবার রাতে ঘুমানোর সময় তাদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। একটা মজার ঘটনা হল ইঁদুর চোখ খোলা রেখে ঘুমোতে পারে।
গবেষকরা ঘুমের নন র্যাপিড আই মুভমেন্টের (এনআরইএম) সময় দুটি উপ-স্তর ঘটতে দেখেন। এটা স্মৃতির পুনরুদ্ধারের সময়, যা ঘুমোনোর সময় স্মৃতি গঠনের জন্য জরুরি। মণির সংকোচনের সঙ্গে মিল রেখে নতুন স্মৃতি আবার চালু হয়। অন্য পর্যায়ে মণি প্রসারণের সময় পুরানো স্মৃতি আবার উঠে আসে। প্রতি পর্যায় দ্রুত ধারাবাহিকভাবে ঘটে। নতুন স্মৃতি একত্রীকরণে কেন পুরানো স্মৃতি মুছে যায় না, গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করে। যেমন, কিভাবে সাইকেল চালাতে হয় তা না ভুলেও মানুষ পিয়ানো বাজাতে শেখে। ইঁদুরের সাথে আমাদের মস্তিষ্কের অনেক মিল থাকলেও, এই ফলাফল যাচাই করার জন্য মানুষের মধ্যেও একই ধরনের বিশ্লেষণ করা দরকার।
গবেষণা জানাচ্ছে, মস্তিষ্ক ঘুমের সময় আলাদা আলাদা বোধ প্রক্রিয়া করে, যাতে বাধা ছাড়া অবিচ্ছিন্নভাবে শেখার সুবিধা হয়। পূর্ববর্তী গবেষণায় মণির আকার ও ঘুমের অবস্থা, এবং ঘুমের অবস্থা ও স্মৃতি গঠনের মধ্যে সংযোগ চিহ্নিত করা গেছে। এই গবেষণা সেই সংযোগগুলোতে বিশদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গবেষকরা দেখেছেন শার্প-ওয়েভ রিপলস (এসডব্লিউআর) যা স্মৃতির ভান্ডারকে প্রভাবিত করে, তা আটকে দিলে ইঁদুরের সংকুচিত মণির পর্যায়ে নতুন কিছু মনে রাখার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়। মস্তিষ্কের বাইরে থেকে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নিরীক্ষণের উপায় থাকলে তা স্মৃতিশক্তি সমস্যার চিকিত্সায় বা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। এই অনুসন্ধান আমাদের মস্তিষ্ক এবং কম্পিউটার সিস্টেমে কীভাবে পুরানো তথ্য ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে সম্পর্কে অনুমানগুলোকে গুরুত্ব দেয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতে, এটা বিপর্যয়কর বিস্মরণ হিসেবে পরিচিত, আর এই ক্ষেত্রে মেশিন জীববিজ্ঞান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই গবেষণা জৈবিক এবং কৃত্রিম স্নায়বিক নেটওয়ার্ক উভয়ের ক্ষেত্রে বিপর্যয়মূলক বিস্মরণ প্রতিরোধের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান, ও স্মৃতি একত্রীকরণে সাহায্য করবে। এই গবেষণা নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।