বহুজনের মাঝেও একা

বহুজনের মাঝেও একা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫

মানুষ কিন্তু সহজাতভাবেই সামাজিক। আমরা বেঁচে থাকি মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। আর এসবের মাধ্যমেই আমাদের পরিচিতি গড়ে ওঠে, একে অপরের সাথে আমরা একাত্ম অনুভব করি। কিন্তু বর্তমান যুগে জীবন মানেই শুধু দৌড়ে চলা। যে যার নিজের মতোই এগিয়ে চলেছে, কাজ করছে। বাড়িতে সকলেই আছেন, অথচ সবাই আমরা এক একটি দ্বীপের মতো বাস করি। এই অনুভূতি থেকেই একাকিত্ব বোধের জন্ম হয়। অনেকেই এই একাকিত্ববোধ ভুলতে মোবাইল সঙ্গী করেন, গান শোনেন, সিনেমা দেখেন বা নিজে নিজের কাজে নিমগ্ন হয়ে তা ভুলে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু তা সাময়িক। আজ একাকিত্ব এবং সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি উদ্বেগজনকভাবে সাধারণ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে যে এই অনুভূতিগুলো আজ ব্যাপক। প্রায় ২৫% বয়স্ক মানুষ এবং ৫-১৫% কিশোরকিশোরীরা একাকিত্বে ভুগছেন। এই পরিসংখ্যানগুলো আজ গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রকাশিত গবেষণা দেখিয়েছে যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং একাকিত্ববোধ, রোগভোগ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি প্রায় ২৬% বৃদ্ধি করে। বাড়িয়ে তোলে মানসিক অবসাদ। এখন প্রশ্ন হল কেন একাকিত্ব আমাদের শরীর এবং মনের জন্য এত খারাপ?
গবেষকরা প্রোটিওমিক্স বা প্রোটিনের অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন কারণ প্রোটিন জিনের অভিব্যক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে প্রোটিন ওষুধের লক্ষ্যের একটি প্রধান উত্স। গবেষণায় যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্ক থেকে ৪২,০৬২ জনের তথ্য এবং ২৯২০ প্লাজমা প্রোটিন অধ্যয়ন করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেন নিঃসঙ্গতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে প্রোটিন উল্লেখযোগ্যভাবে জড়িত এবং প্রদাহের পাশাপাশি অ্যান্টিভাইরাল এবং ইমিউন প্রতিক্রিয়াতেও এদের যোগ রয়েছে। এমনকি দেখা গেছে একাকিত্ব মস্তিষ্কের পাঁচটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে – GFRA1, ADM, FABP4, TNFRSF10A এবং ASGR1 । অর্থাৎ যারা একাকী বোধ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই প্রোটিনগুলোর মাত্রা অন্যান্য ব্যক্তি যারা একাকী বোধ করেন না তাদের তুলনায় বেশি থাকে। তাছাড়াও দেখা গেছে অর্ধেকেরও বেশি প্রোটিন হার্টের রোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। গবেষকরা বলছেন প্রোটিন শুধুমাত্র আংশিকভাবে একাকিত্ব এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে সংযোগ ব্যাখ্যা করে, অন্যান্য সম্ভাবনা যেমন সামাজিক চাপও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নিজেকে ভালো রাখতে মানুষের সাথে মিশতে হবে, শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখতে হবে। সামাজিক সংযোগ স্ট্রেস কমায়, রক্তচাপ কমায় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভালো রাখে। মন, মস্তিষ্ক, বোধবুদ্ধি উন্নত করে। আমাদের সহানুভূতিশীল করে, মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে, মনকে শক্তি যোগায়। তাই বলা যায়- আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।