ছাতার জৈব ব্যাটারি

ছাতার জৈব ব্যাটারি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫

ছাতা মানে ছত্রাক। ছত্রাকদের বৈচিত্র্যর অন্ত নেই। এবার তারা ব্যাটারিও চালাবে। সে ব্যাটারি বিষহীন এবং সম্পূর্ণরূপে পচনীয়। অর্থাৎ তারা পচে গিয়ে জীবজগতে মিশে যায়, কোথাও কোনো রেশ রাখে না। আজকের দূষিত পরিবেশে তাই এদের উপযোগিতা খুবই বেশি হবে বলে মনে করছেন এম্পা সংস্থার সেলুলোস এবং কাষ্ঠ পদার্থ ল্যাবরেটরির গবেষকরা। এই জ্যান্ত কোশ গুলো যে এখনি প্রচুর বিদ্যুৎ তৈরি করছে তা নয়, কিন্তু কৃষিতে কিংবা পরিবেশ-গবেষণার উপযোগী তাপমাত্রা সেন্সর চালাতে পারছে। এই ব্যাটারিটাকে ব্যাটারি ন বলে একটি জীবাণুভিত্তিক জ্বালানি কোশ বললেই যথাযথ হয়। আর সমস্ত জীবের মতো, জীবাণুরাও খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। জীবাণুভিত্তিক এই জ্বালানি কোশগুলোও বিপাকক্রিয়া মারফত তাই করে। সেই শক্তির একটা অংশকে ধরে নিয়ে তারা উৎপাদন করে বিদ্যুৎ। এতদিন পর্যন্ত তাদের এই ক্ষমতা আসত ব্যাকটেরিয়া থেকে। কিন্তু এই প্রথম বিজ্ঞানীরা দুই ধরণের ছত্রাককে মিলিয়ে একটি ক্রিয়াশীল জ্বালানি কোশ তৈরি করতে পেরেছেন। এই দুটি প্রজাতির ছত্রাকের বিপাকক্রিয়া পরস্পরের সম্পূরক। ধনাত্মক তড়িৎদ্বারে একটি ইস্ট ছত্রাক বিপাকক্রিয়া মারফত ইলেকট্রন নির্গত করে। আর ঋণাত্মক তড়িৎদ্বারটির দখল নেয় একটি হোয়াইট রট ছত্রাক, যা একটা বিশেষ ধরণের উৎসেচক তৈরি করে। সেই উৎসেচকটি ইলেকট্রনদের ধরে নেয় এবং কোশের বাইরে পরিবাহিত করে। এই ছত্রাকগুলোকে কিন্তু বাইরে থেকে ব্যাটারি কোশের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয় না; তারা আগাগোড়াই কোশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি হয়ে থাকে। এই ছত্রাক ব্যাটারি তৈরি করা হয় থ্রি-ডি প্রিন্টিঙের কৌশলে। এর ফলে গবেষকদের পক্ষে তড়িৎদ্বারগুলিকে এমনভাবে বানানো সম্ভব হয় যাতে জীবাণুগুলি সহজেই খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। এরজন্য প্রিন্টিঙের কালির সঙ্গে তাদের মিশিয়ে দেওয়া হয়। কাজটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। কারণ কালির উপাদান এমন হতে হবে যার মধ্যে ছত্রাকরা ভালোভাবে বাড়তে পারে। একই সঙ্গে দেখতে হবে কালিটা বেরোবার সময় কোশগুলোকে যেন মেরে না ফেলে। আর বলা বাহুল্য কালিটাকে হতে হবে তড়িৎ-পরিবাহী এবং পচনশীল। অনেক চেষ্টাচরিত্র করে অবশেষে তাঁরা সেলুলোজ-ভিত্তিক সেইরকম একটা উপযোগী কালি তৈরি করতে সমর্থ হলেন। ছত্রাকের কোশগুলো সেলুলোজকেও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যার ফলে ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে সেটাকে বিভিন্ন উপাদানে ভেঙে নিতে পারে। তবে তাদের প্রিয় খাদ্য হল শর্করা। সেটা ব্যাটারি কোশের মধ্যে যোগ করা হয়। এই ছত্রাক ব্যাটারিকে শুকনো অবস্থায় রেখে দেওয়া যায়। দরকারের সময় স্রেফ জল আর খাদ্য যোগ করলেই সেটা কাজ শুরু করে দেয়। এ গবেষণায় জীবাণুবিজ্ঞান, মেটিরিয়াল্‌স বিজ্ঞান, এবং বৈদ্যুতিক ইনজিনিয়ারিঙের বিশেষজ্ঞরা হাত মিলিয়েছেন। জীবাণুবিজ্ঞানীদের শিখে নিতে হয়েছে তড়িৎ-রসায়নের বিবিধ কৌশল, আর সেগুলোকে থ্রি-ডি প্রিন্টিঙের কালির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। ছত্রাক ব্যাটারিকে কীকরে আরও কর্মপটু করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে অন্যান্য অনেক ছত্রাক নিয়ে।
সূত্র: “Electric fungi: The biobattery that needs to be fed.” ScienceDaily. ScienceDaily, 9 January 2025.

http://www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250109125838.htm