
দাবানলের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে আমেরিকার সাদার্ন ক্যালিফর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলস। অস্বাভাবিক শুষ্কতা ও ঝোড়ো হাওয়ার প্রবল দাপট লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে একাধিক দ্রুত এবং ধ্বংসাত্মক দাবানলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো হাওয়ার ফলে দ্রুত শহরাঞ্চলে আগুন ছড়িয়ে যায়। প্রাণ বাঁচাতে লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া। ৮ জানুয়ারী পর্যন্ত দুজনের মারা যাবার খবরও পাওয়া গেছে। প্যালিসেডস ফায়ার নামে পরিচিত সবচেয়ে বড়ো দাবানলটি ৭ জানুয়ারী সকালে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে ৬,৪০০ হেক্টরেরও বেশি জমি পুড়ে যায় এবং প্রায় ১,০০০ পরিকাঠামো ধ্বংস করে দেয়। ইটন ফায়ার নামে পরিচিত দ্বিতীয় বড়ো দাবানলটি, সেই রাতে পাসাডেনার কাছে জ্বলে ওঠে এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত ৪,২৯০ হেক্টরেরও বেশি জমি পুড়িয়ে দেয়। তৃতীয় দাবানল, হার্স্ট ফায়ার, সিলমারের কাছে ২০০ হেক্টরেরও বেশি জমি পুড়িয়ে দেয়। জলবায়ু বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল সোয়েন বলেন সামগ্রিকভাবে, আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দাবানল বিপর্যয় হিসেবে প্রতিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ায় দাবানলের মরসুম সাধারণত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে মনে করা হয়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতার ফলে এই সময়কালকে বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে। লস অ্যাঞ্জেলেস-এলাকার দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার একটি বড়ো কারণ হল সান্তা আনা উইণ্ড নামের বাতাস। এই শুষ্ক বাতাস সাধারণত শরৎ এবং শীতকালে অভ্যন্তরীণ মরুভূমি অঞ্চল থেকে ক্যালিফর্নিয়ার উপকূলের দিকে বয়। চলার পথে পাহাড়ের উপর দিয়ে বাতাস বইতে থাকে। পাহাড়ের উপর থেকে নীচে নামার সময় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধির কারণে এটি সংকুচিত ও উষ্ণ হয়। এর ফলে ইতিমধ্যেই শুষ্ক মরুভূমির বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা আরও কমে যায়, ফলে আগুন জ্বলে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। তাছাড়াও, সান্তা আনা বাতাস প্রতি ঘন্টায় ১৬১ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে, ফলে জ্বলে ওঠা আগুন আরও ছড়িয়ে যেতে পারে। দাবানলের আরেকটি বড়ো কারণ হল অঞ্চলের শুকনো ঘাস এবং গাছপালার প্রাচুর্য, যা সাম্প্রতিক আবহাওয়ার ফলাফল। সোয়েনের মতে যে বছরগুলো অন্যান্য বছরের তুলনায় শুষ্ক হয়, অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকে সেই সময়ে অঞ্চলগুলোতে ঘাসের প্রাচুর্যও কমে যায়। সেক্ষেত্রে আগুন ছড়ানোর প্রবণতা কম থাকে। কিন্তু গত বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল, তাই ঘাসের প্রাচুর্য ঘটে। সান্তা আনা বাতাস এবং বেশি পরিমাণে জ্বালানি এই ধ্বংসাত্মক দাবানলের জন্য যেন মঞ্চ তৈরি করে রেখেছিল। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে এই দাবানল ঘটেছে কিনা তা নির্ধারণ করতে গবেষকদের আরও কিছুটা সময় লাগবে, তবে এটা অনস্বীকার্য যে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন ক্যালিফর্নিয়ায় আরও তীব্র দাবানলের জন্য অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।