সর্দি কিংবা ফ্লু। মরশুম বদলের নিত্যসাথি এই দুই। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে এসে দিব্যি খাচ্ছেন। কিছুদিনের মধ্যে সেরেও গেলেন। আপনি ভাবলেন, ওষুধের কি গুন ! অথচ অজান্তে অনেক টাকা দিয়ে কিনে আনা আপনার এই ওষুধগুলি কেবলমাত্র ‘প্ল্যাসিবো’ হতেই পারে।
প্ল্যাসিবো। এমন ওষুধ, যাতে ওষুধ নেই। কোনও সক্রিয় উপাদান নেই, এমনকি চিনিও নেই। তাহলে? সারছে কিভাবে? আসলে, মেয়াদ শেষে সাধারণ সর্দি বা ফ্লু এমনিই সেরে যায়। আপনি ভাবছেন ওষুধ খেয়ে সেরে উঠছেন এবং আপনি সেরে উঠছেন – এই হল সারকথা।
আজকাল বড় বড় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় প্রচুর কোম্পানির ওষুধ বাজারজাত হচ্ছে। এদের ভিতরে কি আছে তা পরীক্ষা ছাড়া বলা অসম্ভব। যেমন, ফেনাইলেফ্রাইন। এটি কয়েক দশক ধরে বাজারে রয়েছে এবং বিক্রি হচ্ছে। শুধু ওষুধ নয়, বন্ধ নাক খোলার জন্য কিছু ন্যাসাল স্প্রে ও আসলে প্ল্যাসিবো। তবে চিন্তার কিছু নেই। এর ভালো বা খারাপ কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। শুধু রোগীর মনে একটা স্বস্তি আছে “ আমি ওষুধ খাচ্ছি ভালো হয়ে যাবো ”।
প্ল্যাসিবো হল এমন একটি চিকিৎসা বা পদার্থ যার কোনো থেরাপিউটিক মূল্য নেই। নতুন ওষুধ বা চিকিৎসার কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য প্ল্যাসিবো প্রায়ই ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে ব্যবহৃত হয়। একটি সক্রিয় চিকিৎসার সাথে এর প্রভাব তুলনা করার জন্য।
আমরা সাধারণত আশা করি, একটি ওষুধ তার কিছু অভিনব প্রক্রিয়া বা সক্রিয় উপাদান দিয়ে আমাদের শরীরে কাজ করবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে, সেই প্রভাব আমাদের বিশ্বাস থেকে আসে। নিউরোসায়েন্টিস্টরা ‘প্ল্যাসিবো ইফেক্ট’ খুঁজে পায়নি সেভাবে। তবে অজান্তে প্ল্যাসিবো নিলে, মস্তিষ্কের অংশগুলি কীভাবে প্রত্যাশা এবং বিশ্বাস তৈরি করে, সে সম্পর্কে তাদের কিছু ভাল ধারণা রয়েছে।
বার্নস্টেইন এবং তার সহকর্মীরা, এই মুহূর্তে একটি গবেষণায় কাজ করছেন। একটি ইমারজেন্সি রুম পরিদর্শন করার পরে, যে রোগীরা, ওপিওড ব্যথার ওষুধের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন পাচ্ছেন, তাদের তারা প্ল্যাসিবোও দিচ্ছেন এবং খুব সততার সাথেই, রোগীদের জানিয়ে দিচ্ছেন যে তাদের প্লেসবোস এই দেওয়া হলো। তারা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ডিসচার্জ হওয়ার পরে, ওপেন প্ল্যাসিবো/ জেনেশুনে প্ল্যাসিবো নেওয়ার পর তারা কতগুলি ওপিওড নিচ্ছেন। তাদের ওপিওড ব্যবহার, আদও এই ওপেন প্ল্যাসিবো কমাতে পারে কিনা তা দেখা”।
২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, একটি শিশুর কাশি শুধুমাত্র রঙিন, স্বাদযুক্ত জল (যা সে ওষুধই ভেবে খেয়েছে) তাতে অমৃতের সমান ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। “ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডার উপসর্গের চিকিৎসার জন্য জ্ঞাতসারে একটি প্ল্যাসিবো ব্যবহার করা ‘ভাল ওষুধ’ হতে পারে,” বার্নস্টেইন এর সহকারী সম্পাদক লিখেছেন।
তবে মাথায় রাখতে হবে, একটি প্ল্যাসিবো প্রতিটি অবস্থার জন্য কাজ করবে না বা এটি সবাইকে একইভাবে সাহায্য করবে না। গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে এমন পরীক্ষা বাদ রাখাই ভালো। তবে আপনি যদি মনে করেন, আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন, তবে আপনি যে কোন চিকিৎসায় আপনার মনের জোর দিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবেন।