‘কালিয়া’র কামড় ! দমনে কৃ বু

‘কালিয়া’র কামড় ! দমনে কৃ বু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫

বিষাক্ত সাপের কামড়, সারা বিশ্বে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এবং অগণিত মানুষকে পঙ্গু করে তোলে। তবুও অ্যান্টিভেনাম উৎপাদনের পরিমাণ এবং উপায়ে খুব একটা রদবদল ঘটেনি। আশার আলো দেখাচ্ছে কৃ বু (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI)- তৈরি হচ্ছে,সিন্থেটিক অ্যান্টিভেনাম।

১৮৯৪ সাল থেকে প্রচলিত আলবার্ট ক্যালমেট দ্বারা অ্যান্টিভেনাম তৈরীর পদ্ধতিটি এই রকম- কোনো পশুকে (বিশেষত বড় মাপের পশু যেমন ঘোড়া), প্রথমে সাপের বিষযুক্ত ইনজেকশন দিয়ে, তা থেকে পশুর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, তা সংগ্রহ করা। পরে সেই আন্টিডোটকে বিশুদ্ধ করে তা থেকে অ্যান্টিভেনাম প্রস্তুত করা। প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ।

নোবেল বিজয়ী ডেভিড বেকার, এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমোথি জেনকিন্স ও তার সহকর্মীরা কৃ বু র সাহায্যে ‘বাইন্ডার’ নামক ছোট প্রোটিন তৈরী করেছে। প্রচলিত অ্যান্টিবডির তুলনায় এটি তৈরি করা সহজ এবং কম ব্যয়বহুল। আকারে ক্ষুদ্র হওয়ায় প্রোটিনগুলি টিস্যুর মধ্যে সহজে পৌঁছে যেতে পারছে। পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াই প্রস্তাবিত অ্যান্টিভেনমগুলি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যার ফলে প্রত্যন্ত জায়গাগুলিতে সাপের কামড় রোধে এগুলিকে রেখে দেওয়া যায়। অর্থাৎ উপযোগিতা আরও বেশি।তারা কৃ বু প্রোগ্রামটির নাম রেখেছেন ‘আর এফ ডিফিউজার’।

কোবরা মোম্বাসার মতন বিষধর সাপগুলির ক্ষেত্রে প্রচলিত আন্টিবডির চেয়ে এই ‘প্রোটিন বাইন্ডার’ অনেক বেশি কার্যকর। গবেষকরা ইঁদুরের উপর এই পরীক্ষা চালিয়েছেন। ইঁদুরগুলিকে প্রথমে সাপের বিষযুক্ত ইনজেকশন দেন। তার ১৫ মিনিট পর আবার ‘প্রোটিন বাইন্ডার’ ইনজেক্ট করেন। তারা লক্ষ্য করেন, প্রোটিন বাইন্ডার ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি আগের তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি সরিয়ে তুলছে এবং সাপের বিষকে শিথিল করে দিতে পারছে। ফলত ইদুরগুলি প্রাণে বেঁচে যাচ্ছে।
তবে নাজা নিগ্রীকোলিস যা কেউটে গোষ্ঠীর মধ্যে মারাত্মক বিষধর, সেক্ষেত্রে কোষের বেঁচে থাকার হার ১০০ শতাংশ থেকে কমে ৯০ বা ৭০ শতাংশে নেমে গিয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক সময় ইঁদুরের ক্ষতের আকার কমাতেও ব্যর্থ হচ্ছে।

কার্তিক সুনাগর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের বিষ গবেষক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য একটি চমৎকার পদ্ধতি ডিজাইন করা গেছে। প্রোটিন বাইন্ডার যদি তিন আঙুলের সমান সাপেরবিষ ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে, তবে মানুষের উপর প্রয়োগ করে দেখতে হবে”। তবে নতুন কোন সম্ভাব্য ওষুধের মতনই এক্ষেত্রে বলতে যায়, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর ফলাফল না আসা পর্যন্ত এখনই কোন সিদ্ধান্তে না পৌঁছানোই, সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 3 =