উৎকণ্ঠা আর কতদিন?

উৎকণ্ঠা আর কতদিন?

ড. শামীম হক মন্ডল
Posted on ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫

গত বছরের ৫ই জুন বুচ উইলমোরকে সাথে নিয়ে বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চেপে মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস।কথা ছিল তড়িঘড়ি ফিরে আসবেন, কিন্তু তা আর হলো কই! মহাকাশযানের হিলিয়াম গ্যাস লিক করে ঢুকে যাচ্ছিল প্রপালশন সিস্টেমে। তাছাড়া অনেকগুলো থ্রাস্টারও ঠিকঠাক কাজ করছিল না, অগত্যা এই ত্রুটিপূর্ণ ক‍্যাপসুলকে নাসা পৃথিবীতে খালি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল, ওদিকে সুনিতা ও বুচ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেই থেকে যান।

মহাকাশচারীদের বাণিজ্যিক মহাকাশ যাত্রার জন্য বোয়িং এবং স্পেসএক্স দুই সংস্থার সাথেই বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয় নাসার। এলন মাস্কের স্পেসএক্স এ পর্যন্ত নাসার জন্য নয়টি ক্রুড ফ্লাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে, সাথে কিছু বাণিজ্যিক মিশনও, কিন্তু এটি ছিল বোয়িংয়ের পাঠানো প্রথম ক্রুড ফ্লাইট। বোয়িং এবং নাসার প্রকৌশলীরা স্টারলাইনার ক্রাফটের প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি বোঝার জন্য কয়েক মাস সময় ব্যয় করেছেন। তাঁরা মহাকাশে এবং পৃথিবীতে দু জায়গাতেই ক্রমাগত পরীক্ষা করে যাচ্ছে ও প্রাপ্ত তথ‍্য বিশ্লেষণ করছে। প্রথমে তাদের আশা ছিল নভোচারীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরাতে পারবে, কিন্তু একটা সময় পরে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন স্টারলাইনারে ফেরা সম্ভব নয়, সুনীতাদের অন‍্য মহাকাশযানেই ফিরতে হবে ।

গত আগস্টের শেষ দিকে তারা জানিয়ে ছিল যে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিক হেগ এবং রাশিয়ান মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভকে বহনকারী ক্রিউ-9 মিশন, সুনীতাদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরবে।কিন্তু কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা ও ‘হেলেন’ হারিকেনেরর জন্য সেই মিশন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় নাসা। পরে আবার নাসা জানায় ক্রিউ-10 মিশনে তাঁদের ফেরানো হবে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট মিশনের সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীরা ‘ড্রাগন’ নামক অন‍্য একটি মহাকাশযান নির্মাণে ব্যস্ত থাকায় মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এই দুই নভোচারীকে। এই মিশনে থাকবেন নাসার মহাকাশচারী অ্যান ম্যাকক্লেইন ও নিকোল আয়ার্স, রাশিয়ান মহাকাশচারী কিরিল পেসকভ এবং জাপানি মহাকাশচারী তাকুয়া ওনিশি। তাঁরা এই মিশনের জন্য প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে।

আট দিনের এই নভোযাত্রা আদতে দশ মাসেরও বেশি মহাকাশ অভিযানে পর্যবসিত হচ্ছে! অপ্রত্যাশিত ভাবে এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে সুনীতাদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাঁদের হাড় ও পেশী, এমনকি এর প্রভাব পড়ছে দৃষ্টিশক্তিতেও। যাবতীয় বাধা বিপত্তি কাটিয়ে সুনীতারা কবে ফিরবেন, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন অগণিত মহাকাশপ্রেমীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − seventeen =