আলোকপ্রভ প্রোটিনে ৫০ কোটি বছরের বিবর্তনের ইতিহাস

আলোকপ্রভ প্রোটিনে ৫০ কোটি বছরের বিবর্তনের ইতিহাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

প্রোটিন অণুগুলোকে বলা যায় প্রাণ-নির্মাণের ইট। সম্প্রতি কৃ বু-র সাহায্য নিয়ে ‘ই এস এম-৩’ নামে একটি মডেল তৈরি করে এই ইটগুলি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়েছে। সায়েন্স পত্রিকায় এর প্রতিবেদন বেরিয়েছে। এই মডেল তিনটি বিষয়ে একসঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ১) প্রোটিন পরম্পরা (সিকোয়েন্স), ২) গঠনকাঠামো বিষয়ক তথ্য, ৩) জৈব তথ্য কীভাবে জিন বা প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয় (ফাঙ্কশনাল অ্যানোটেশন)। আগের মডেলগুলিতে কেবল প্রথমটিই সম্ভব হত। এখন এই একটিমাত্র মডেলের দৌলতে ৯৮০০ কোটি মাপকাঠি প্রয়োগ করে অত্যন্ত জটিল জৈব জ্ঞানের সংকেত-রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ‘ইভোলিউশনারি ফর্জ’ সংস্থার টমাস হেইন্‌স ও তাঁর সহকর্মীরা এই মডেল ব্যবহার করে এমন একটি অভিনব আলোকপ্রভ (ফ্লুওরিসেন্ট) প্রোটিন তৈরি করতে পেরেছেন যার জিন-পরম্পরা এতদিন যা কিছু দেখা গেছে তা থেকে একেবারে আলাদা। হেইন্‌স বলেছেন, এর তাৎপর্য হল, ’৫০ কোটি বছরের বিবর্তনের প্রক্রিয়া অনুকরণ (সিমুলেট) করা সম্ভব হয়েছে’। কারণ মডেলটি প্রোটিন দেহের এমন সব পরিসরে পৌঁছতে পেরেছে যার চেহারা বহু যুগের ওপারের মতো। এই মডেলটি গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৩.৫২ বিলিয়ন প্রোটিন পরম্পরা, ২৩৬ মিলিয়ন ত্রিমাত্রিক গঠনকাঠামো এবং ৫৩৯ মিলিয়ন অ্যানোটেটেড ফাংশন থেকে ৭৭১ বিলিয়ন অনন্য টোকেন সংগ্রহ করা হয়েছে। এর ফলে এতদিন-অদৃশ্য অনেক প্যাটার্ন যেমন দেখা গেল, তেমনি প্রোটিনরা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ সমাধা করে, তাও বোঝা গেল। আলোকপ্রভ প্রোটিনেরা নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যেকারণে কোশের অভ্যন্তরের প্রক্রিয়াগুলির আণুবীক্ষণিক অধ্যয়ন এবং সংশ্লিষ্ট চিত্রনির্মাণের কাজে এরা অপরিহার্য। নতুন মডেলে এবার একাজ অনেক তাড়াতাড়ি করা যাবে। এছাড়া হয়তো এবার উৎসেচকগুলিকে পরিবেশের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আরো শক্তপোক্ত করে তোলা সম্ভব হবে, কিংবা হয়তো এমন প্রোটিন তৈরি করা সম্ভব হবে যা দূষণকারী পদার্থকে ধরে ফেলে ভাঙতে পারবে, সম্ভাবনাময় প্রোটিনগুলিকে চিহ্নিত করে দ্রুত ওষুধ বানানোও সম্ভব হবে। উৎসুক বিজ্ঞানীরা এই মডেলের সাহায্যে তাঁদের পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে পারবেন, তার জন্য কোড নিয়ে ধস্তাধস্তি করবার প্রয়োজন হবে না। ফলে শক্তি-পুনর্বীকরণ নিয়ে, জৈব-ওষুধ নিয়ে, কিংবা কৃত্রিম জীববিজ্ঞান নিয়ে কর্মরত বিজ্ঞানীরা এমন সব প্রোটিন নিয়ে কাজ করতে পারবেন যা প্রকৃতিতে অভূতপূর্ব। ভবিষ্যতে হয়তো এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা দ্রুত নতুন নতুন প্রোটিনের ধারণায় উপনীত হয়ে সেগুলোকে রোবোটিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে পারবেন। হয়তো ভবিষ্যতে পরিকল্পনা মাফিক প্রোটিন তৈরি করা যাবে, ঠিক যেভাবে আমরা কম্পিউটার পর্দায় লেখা বা ছবি সম্পাদনা করি। তবে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, বাস্তব জগতে এইসব প্রোটিনের প্রয়োগ করার আগে ভালোভাবে তার উপযুক্ততা যাচাই করে নেওয়া দরকার। কাগজে কলমে যেটা খুব সম্ভাবনাময়, সেগুলোকে ল্যাবরেটরিতে ভালো করে খুঁটিয়ে যাচাই করার প্রয়োজন হতে পারে।
সূত্র: earth.com 25.1.2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × three =