লৌহযুগের ব্রিটেনে নারী প্রাধান্য

লৌহযুগের ব্রিটেনে নারী প্রাধান্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

প্রমাণ মিলেছে, প্রাচীন ব্রিটেনে লৌহযুগে ক্ষমতার চাবিকাঠি ছিল নারীর হাতে।
এমন একটি পৃথিবী কল্পনা করুন যেখানে পুরুষকেন্দ্রিক পরিবার গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরিবর্তে, গুরুত্ব ছিল নারীর।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা লৌহ যুগের ব্রিটেনে সমাহিত মানুষের প্রাচীন ডিএনএ অধ্যয়ন করে আবিষ্কার করেছেন যে এই সম্প্রদায়ের পরিবারগুলি তাদের পূর্বপুরুষদের পরিচয় প্রাথমিকভাবে তাদের মায়ের বংশের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছে, তাদের পিতাদের বঙশের মাধ্যমে নয়। এটি একটি অবাক করা আবিষ্কার, কারণ ইতিহাস জুড়ে বেশিরভাগ সমাজ পুরুষ দ্বারা পরিচিত বংশের উপরই বেশি মনোযোগী হয়েছে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে লৌহযুগের ব্রিটেন হয়তো আগে যা মনে হয়েছিল তার চেয়ে বেশি মাতৃতান্ত্রিক ছিল। ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল দ্বীপ জুড়ে বিস্তৃত “মাতৃতান্ত্রিকতার” প্রমাণ উন্মোচন করেছে।
মাতৃতান্ত্রিকতা বলতে এমন একটি সামাজিক ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে কর্তৃত্ব নারীর হাতে থাকে এবং মায়ের দিক থেকে বংশ পরিচিতি লাভ করে। লৌহ যুগের কবরস্থান থেকে প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে অনেক অঞ্চলে, বেশিরভাগ ব্যক্তি অল্প সংখ্যক মহিলা পূর্বপুরুষের বংশধর।
এর থেকে বোঝা যায় যে পুরুষরা বিয়ের পর তাদের স্ত্রীদের পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। এবং জমি এবং পারিবারিক নাম পুরুষদের নামে বিবেচিত হওয়ার পরিবর্তে নারীদের নামে বিবেচিত হত । অর্থাৎ জমি ও সম্পদের উপর নারীদের ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ বেশি ছিল।
কেবল এক জায়গায় নয়, লৌহ যুগের ব্রিটেনের অন্যান্য অংশেও একই ধরণের নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে এটি একটি সাধারণ প্রথা ছিল।
গবেষকরা লৌহ যুগে ডরসেটে বসবাসকারী একটি কেল্টিক উপজাতি ডুরোট্রিজেসের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। “ডুরোপোলিস” নামে পরিচিত একটি স্থান, উইন্টারবোর্ন কিংস্টনে সমাধি পরীক্ষা করে তারা দেখেছেন যে মহিলাদের প্রায়শই কবরস্থানে নানা জিনিসপত্র দিয়ে সমাহিত করা হত। এটি তাদের উচ্চতর সামাজিক মর্যাদার ইঙ্গিত দেয় এবং স্পষ্ট করে দেয় যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে নারীরা প্রধান ভূমিকা পালন করত।
লৌহ যুগের ব্রিটেনে নারীরা ঘরের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তারা রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বৌডিকা ও কার্টিমান্ডুয়া নামে দুই রানী সেনাবাহিনী পরিচালনা করতেন। জিনগত বিশ্লেষণও এই তথ্যকে সমর্থন করে। অধিকন্তু, গবেষণাটি লৌহ যুগে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে উল্লেখযোগ্য অভিবাসনের প্রমাণ উন্মোচিত করেছে, যা ব্রিটেনে কেল্টিক ভাষাগুলির আগমনের জটিল কাহিনীতে আরেকটি স্তর যুক্ত করেছে।এই গবেষণাটি জোরালো প্রমাণ দাখিল করে যে লৌহ যুগের ব্রিটেন এমন একটি সমাজ ছিল যেখানে নারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা প্রাচীন ইউরোপে লিঙ্গ ভূমিকা এবং সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী ধারণার সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + nine =