জীবাণু ও পৃথিবী গ্রহের জলবায়ুর ভারসাম্য

জীবাণু ও পৃথিবী গ্রহের জলবায়ুর ভারসাম্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এবং পেরুভিয়ান আমাজনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একযোগে পেরুর উত্তর-পশ্চিম আমাজনীয় রেইনফরেস্ট-এর গ্রীষ্মমন্ডলীয় খাদ গহ্বরগুলির জলাবদ্ধ, স্বল্প অক্সিজেনের সাথে অভিযোজিত জীবাণুদের একটি অজানা পরিবার শনাক্ত করেছেন। এই দিগদর্শী গবেষণা অনুসারে, বালির দানার চেয়ে হাজার গুণ ক্ষুদ্র , নতুন আবিষ্কৃত জীবাণুর এই পরিবার পৃথিবীর জলবায়ুর উপর অপরিসীম প্রভাব বিস্তার করে।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, এইসব জীবাণু খাদ গহ্বরগুলিকে বিশাল কার্বন জলাধার হিসাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এরা বিপুল পরিমাণে কার্বন আটকে রাখে এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব হ্রাস করে। কিন্তু খরা এবং উষ্ণায়নের মতো পরিবেশগত পরিবর্তন এদের সক্রিয় করে তুলতে পারে। সে অবস্থায় এরা কার্বন সঞ্চয়কারী থেকে কার্বন নির্গমনকারীতে রূপান্তরিত হতে পারে।
আবার এই জটিল বাস্তুতন্ত্রে মানুষের হস্তক্ষেপের ফলেও ব্যাপক কার্বন নিঃসরণ হতে পারে। গবেষকদের অনুমান, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ, বিঘ্নিত খাদ গহ্বরগুলি বায়ুমণ্ডলে পঞ্চাশ কোটি টন কার্বন নির্গমন করতে পারে। এটি বিশ্বের মোট বার্ষিক জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমনের পাঁচ শতাংশর সমান।
মাইক্রোবায়োলজি স্পেকট্রাম জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি এই গুরুত্বপূর্ণ খাদ গহ্বরগুলিকে রক্ষা করার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এ গবেষণা জীবাণুদের জীবন এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্যকে তুলে ধরেছে।আমাজনীয় খাদ গহ্বরগুলিবিশ্বের বৃহত্তম কার্বন সঞ্চয়কারী স্থানগুলির মধ্যে একটি । যা ঘন সম্পৃক্ত মাটিতে আনুমানিক তিনশো কোটি টন কার্বন সঞ্চয় করে। যা বিশ্বের সমস্ত বনে সঞ্চিত কার্বনের প্রায় দ্বিগুণ। খাদ গহ্বরগুলির জলাবদ্ধ অবস্থা পচনকে ধীর করে দেয়, যা হাজার হাজার বছর ধরে জৈব উপাদানসমূহকে জমা করতে সাহায্য করে। এই বাস্তুতন্ত্রটি গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই জীবাণুগুলি অনেক জীবের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড প্রমুখ বিষাক্ত গ্যাসকে বিপাক করে শক্তিতে রূপান্তরিত করে পরিবেশের কার্বন জনিত বিষাক্ততা হ্রাস করে। কার্বন যৌগ ভেঙে তারা হাইড্রোজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে যা অন্যান্য জীবাণু মিথেন তৈরি করতে ব্যবহার করে।
কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এবিষয়ে চিন্তিত, কারণ যদি খাদ গহ্বরগুলি শুকিয়ে যায়, তাহলে তারা প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন নির্গত করতে শুরু করবে, যা বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যাকে আরও গুরুতর করে তুলবে। তাই গবেষকরা এই অঞ্চলে বন উজাড় না -করা এবং খনন বন্ধ করার মতো টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা জীবাণুগুলির ভূমিকা অনুধাবন করতে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রগুলিকে কীভাবে সর্বোত্তমভাবে রক্ষা করা যায় তা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে আরও গবেষণা করতে চেয়েছেন।
এই আবিষ্কারটি দেখায় যে পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবের ভূমিকাও কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এই জীবাণুগুলি সম্পর্কে আরও জানার মাধ্যমে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে পেতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − seventeen =