
ইংল্যান্ডের প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রমাণ করেছেন যে ইংল্যান্ডের শেষ স্যাক্সন রাজা হারল্ডের হারিয়ে যাওয়া বাসস্থানটিই প্রসিদ্ধ বেইউক্স সেলাই চিত্রে দেখানো হয়েছে। এটি মূলত একটি এমব্রয়ডারি করা কাপড়, প্রায় সত্তর মিটার লম্বা এবং পঞ্চাশ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। এটিতে একহাজার ছেষট্টি সালে ইংল্যান্ডের নর্মান বিজয়ের ঘটনাগুলি চিত্রিত হয়েছে ।
নিউক্যাসল এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল বিশ্বাস করেন যে তাঁরা একটি রহস্যের সমাধান করতে পেরেছেন। পুরাতন খননের খতিয়ান পুনরায় পরীক্ষা করে এবং নতুনভাবে জরিপ করে, তাঁরা পশ্চিম সাসেক্স গ্রামের একটি বাড়িকে হ্যারল্ড গডউইনসনের দীর্ঘকালের হারিয়ে যাওয়া শক্তিকেন্দ্রের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । এটি একটি স্মরণীয় আবিষ্কার, কারণ এটি ১০৬৬ সালে হেস্টিংসের যুদ্ধে ইংল্যান্ডের শেষ অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজার মর্মান্তিক পরাজয়ের আগে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্থান রূপে প্রমাণিত হল। এটি প্রাথমিকভাবে পূর্বে অজ্ঞাত দুটি মধ্যযুগীয় ভবনের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে যার একটি বর্তমান বাড়িতে ও অন্যটি বাগানে।
এই ঐতিহাসিক ধাঁধাটি উন্মোচনের মূল চাবিকাঠি হলো ২০০৬ সালে খননের সময় একটি বৃহৎ কাঠের ভবনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আবিষ্কৃত একটি শৌচাগার। প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখেছেন যে, দশম শতাব্দী থেকে শুরু করে, উচ্চ-মর্যাদার অ্যাংলো-স্যাক্সন বাড়িগুলিতে শৌচাগারগুলি প্রায়শই ছিল সম্পদ এবং গুরুত্বের নিশ্চিত প্রতীক।নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ ডানকান রাইটের নেতৃত্বে দ্য অ্যান্টিকোয়ারিজ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গেছে যে ২০০৬ সালের খননে আবিষ্কৃত একটি বাড়ি আসলে নরম্যান বিজয়ের আগে নির্মিত একটি অ্যাংলো-স্যাক্সন অভিজাত বাসস্থান। তিনি বলেন ওই খননকাজে প্রাপ্ত একটি অ্যাংলো-স্যাক্সন এন-স্যুট-এর পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটি দেখে তাদের মনে হয়েছিল, সমস্ত প্রমাণের পাশাপাশি, এটা সন্দেহাতীতভাবে হ্যারল্ড গডউইনসনের ব্যক্তিগত ক্ষমতা কেন্দ্রের অবস্থান। বেইউক্স সেলাই চিত্রে সেটাই বিস্তৃতভাবে চিত্রিত হয়েছিল।
এই আবিষ্কারের সাথে আরও অন্যান্য প্রমাণ যোগ করা হয়। যার মধ্যে পূর্বে অজানা দুটি মধ্যযুগীয় ভবনের আবিষ্কারও ছিল। দলটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে তারা হ্যারল্ডের বাসস্থানটি সত্যিই খুঁজে পেয়েছে। এটি কেবল একটি বাড়িই নয়, সেখানে একটি বিশাল হল এবং কাছাকাছি একটি গির্জাও ছিল। যা অ্যাংলো-স্যাক্সন ধনী এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার একটি বিরল আভাস দেয়।
এই অসাধারণ আবিষ্কারটি ইংল্যান্ডের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের উপর আলোকপাত করে। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অলিভার ক্রেইটন এই ধরনের আবিষ্কারের বিরলতার উপর জোর দেন যা ‘যেখানে ক্ষমতার অধিষ্ঠান’ (‘হোয়ের পাওয়ার লাইজ’) প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছিল। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো বোশামের মতো অভিজাত কেন্দ্রগুলোর উৎপত্তি এবং প্রাথমিক বিকাশ অনুসন্ধান করা। এবং সমগ্র ইংল্যান্ড জুড়ে এই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের মূল্যায়ন করা।