আমেরিকায় সরকারি স্বাস্থ্য-তথ্য বিপর্যয়

আমেরিকায় সরকারি স্বাস্থ্য-তথ্য বিপর্যয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

৩১ জানুয়ারি তারিখে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ‘সেনটার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) -এর বেশ কয়েকটি ডেটাসেট নেট থেকে তুলে নেওয়া হয়। যথা জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা, বিভিন্ন গবেষণা, নীতি-নির্ধারণ ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারমাধ্যম সংক্রান্ত ডেটাসেট। ২ ফেব্রুয়ারি নাগাদ এইসব সাইটের কিছু প্রচ্ছদপত্র অনলাইনে ফিরে আসে। তাতে লেখা – ‘রাষ্ট্রপতি টাম্প-এর প্রশাসনিক নির্দেশ মাফিক সিডিসি-র ওয়েবসাইটে বদল আনা হচ্ছে’। ইঙ্গিতটা এই যে আরও কিছু অদলবদল হতে চলেছে। কিছু প্রতিবেদন ও নথি আবার দেখা যাচ্ছে, কিন্তু অনেকগুলোই যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ‘যৌনতা ও লিঙ্গ’, ‘জাতিরূপ সমতা (রেশিয়াল ইকুইটি)’, ‘বৈচিত্র্য সমতা ও গ্রহণযোগ্যতা’, ‘বৈদেশিক সহায়তায় বিরতি’ প্রভৃতি যে-নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন তারই সঙ্গে সংগতি রেখে এইসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে অনুমান। সরকারি হুকুমনামায় ‘ লিঙ্গসাম্য মতাদর্শর সমর্থক ও প্রচারকারী যাবতীয় বহির্মুখী মাধ্যমকে নামিয়ে ফেলতে’ বলা হয়েছে, ওই বিষয়ে সবরকম সরকারি নথি, নির্দেশ, অপেক্ষমান নিয়মাবলি ‘তুলে নেওয়ার’ কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নজর রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষাগুলি মৌলিক ভূমিকা পালন করে। এই বিভাগের সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি ডেটাসেট হল ‘আচারণগত ঝুঁকির কারণসমুহ নজরদারি সিস্টেম’ (বি আর এফ এস এস) । গত চল্লিশ বছর ধরে এটি কাজ করে চেলেছে। এইসব তথ্যও সাময়িকভাবে নেট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। যখন ফিরিয়ে দেওয়া হল, তখন দেখা গেল, প্রশ্নমালা আর নিয়ম সংহিতাটি বাদ পড়েছে। অর্থাৎ বাদ গেছে স্বাস্থ্য বিষয়ক নানারকম তথ্য, যথা স্থূলতার হার, স্তন ক্যান্সার সমীক্ষা, আগে থেকেই ভোগা মানুষদের অনুপাত, টিকাকরণের অনুপাত। প্রতিটি স্টেটের জন্য নমুনা-পরীক্ষার আলাদা আলাদা উপাত্ত (ডেটা) থাকায় এগুলি বিশেষ করে জনবিরল স্টেটগুলির ও গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য সমস্যা অনুধাবনের জন্য বিশেষ উপযোগী ছিল। ১৯৯০এর পর থেকে হাইস্কুল ছাত্রদের ধূমপান, ড্রাগের নেশা, মদ্যপান, খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভ্যাস সংক্রান্ত মূল্যবান উপাত্ত থাকত ‘ঝুঁকিপূর্ণ যুব আচরণ সমীক্ষা’ সাইটে, যেগুলি যুবদের সরাসরি প্রশ্ন করে তথ্যগুলি সংগৃহীত হেয়েছিল, বাবা-মাকে নয়। এটিও নেট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রেও প্রশ্নমালাগুলি এবং নিয়ম সংহিতাগুলি ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। উক্ত সমীক্ষা থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ১৩-১৯ বছর বয়স বর্গের ছেলেমেয়েদের একটা বড়ো অংশ মন খারাপ আর আশাহীনতার শিকার, বিশেষ করে কোভিড পর্বে ওই বয়স-বর্গের মেযেদের মনে আত্মহত্যার ভাবনা খুব বেড়ে গিয়েছিল। ভিন্ন-লিঙ্গ পরিচিতি-যুক্ত তরুণদের মধ্যে গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য-বৈষম্য লক্ষ করা গিয়েছিল। এসব তথ্যই আপাতত মানুষের নাগালের বাইরে। একই ভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের এবং সারা বিশ্বের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তাদের মধ্যে এইচ আই ভি সমস্যার মোকাবিলা সংক্রান্ত উপাত্ত, পেশাদার স্বাস্থ্য-কর্মী, হাসপাতাল, সামাজিক বিপন্নতা সূচক, পরিবেশগত সুবিচার সূচক প্রভৃতি উপাত্তও নেট থেকে আপাতত নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনসাধারণের স্বাস্স্থ্য-পরিষেবা লাভ সংক্রান্ত সাইটগুলিও হয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, নাহয় বদলে দেওয়া হয়েছে। সূত্র: A Look at Federal Health Data Taken Offline, KFF, 2 February, 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + five =