মানুষের বিমূর্ত চিন্তার ইতিহাস

মানুষের বিমূর্ত চিন্তার ইতিহাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রায় লক্ষ বছর আগে, প্রাচীন মানুষেরা লোয়ার গ্যালিলির একটি গুহা-প্রান্তরে, তাদের একজনকে সমাধিস্থ করেছিল । শোকার্তরা মৃত ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে সেখানে সামুদ্রিক শামুক, গিরিমাটি এবং পাথুরে কারুশিল্প সহ বেশ কিছু উপহার রেখে যায়। ১৯৭০-এর দশকে কাফজেহ গুহা থেকে তাদের ব্যবহার করা একটি সরঞ্জাম (টুল) উৎখনন করা হয়। ইসরায়েলি ও ইউরোপীয় গবেষকদের একটি নতুন গবেষণায় সরঞ্জামটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। “বেশিরভাগ গবেষক একটি ইউরোপ-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন যা মনে করে, আধুনিক মানুষ প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছর আগে তাদের বিমূর্ত চিন্তাশক্তি ,সাংগঠনিক ক্ষমতা, দল বেঁধে কাজ করার পদ্ধতি দিয়ে বিশ্ব জয় করেছিল। তাই এরা নিয়ান্ডারথাল এবং অন্যান্য হোমিনিনদের অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল।” ড. মে গোডার-গোল্ডবার্গার টাইমস অফ ইসরায়েলকে একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন। ড. গোডার এবং তার সহকর্মীরা এই ঐতিহ্যগত ইউরোকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। এঁদের গবেষণা এই কথা সূচিত করেছে যে বিমূর্ত চিন্তা এবং প্রতীকী প্রকাশ, মানব-ইতিহাসে আরও আগের ঘটনা । হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়, এবং বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এই গবেষণায় সংযুক্ত হয় জোহানেস গুটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলগারভে বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণার প্রাণকেন্দ্র আধুনিক ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রাচীন স্থান। কাফজেহ গুহা, মানোট গুহা, কুনেইত্রা স্থল, এবং আমুদ গুহা থেকে পাওয়া পাথরের সরঞ্জাম এবং প্রাপ্ত সামগ্রী-নিদর্শন পরীক্ষা করা হয়েছে। কুনেইতত্রা স্থল চুয়ান্ন হাজার বছরের পুরানো গোলান হাইটসে অবস্থিত। এখানে মানব দেহাবশেষ মেলেনি। তবে অন্যান্য কৌতূহলজনক প্রমাণ প্রদানে কুনেইত্রা বিশেষ উল্লেখ্য। গবেষকরা বেশ কয়েকটি নিদর্শনে কারু নকশা খুঁজে পেয়েছেন। বিকিরণকারী রেখা, সমান্তরাল চিহ্ন, এবং কেন্দ্রীভূত বৃত্তের মতন আঁকা নকশিকাজ যত্ন সহকারে করা হয়েছিল সরঞ্জাম ব্যবহার করেই। সেগুলিকে নিছক ‘এলোমেলো দাগ’ বলা চলে না, এ হল তাদের সযত্নকৃত কারু-শিল্পের প্রকাশ। এই সময়কালে এই ধরনের অলংকৃত সরঞ্জাম বিরল। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, উন্নত জ্ঞানীয় ক্ষমতাগুলি আধুনিক মানুষের মধ্যে হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়নি, মানব বিবর্তনের পথে অনেক আগেই তার বিকাশ ঘটেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =