মনোনিবেশ ও বায়ুদূষণ

মনোনিবেশ ও বায়ুদূষণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নেচার কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে স্বল্পমেয়াদী বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসা মানুষদের দৈনন্দিন কাজগুলি, (যেমন, মুদি দোকানে কেনাকাটা) আরও কঠিন হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রার পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM) দূষণ একজন ব্যক্তির কাজের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা, মনোযোগ বিচ্যুতি এড়ানো এবং যথাযথ আচরণ করার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
বারমিংহাম ও ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের মোমবাতির ধোঁয়ার সাহায্যে তৈরি উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণ বা পরিষ্কার বাতাসের সংস্পর্শে আনা হয়েছিল। দূষিত পরিবেশে আসার আগে ও চার ঘণ্টা পরে অংশগ্রহণকারীদের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। এতে তাদের কাজের স্মৃতি, আবেগ সনাক্তকরণ, সাইকোমোটর গতি (psychomotor speed), এবং ধারাবাহিক মনোযোগ ইত্যাদি মাপার চেষ্টা করা হয়।
এর ফলাফলগুলি থেকে দেখা যায় যে অংশগ্রহণকারীরা যেভাবেই শ্বাস নিন না কেন, মনোযোগ এবং আবেগ সনাক্তকরণ বায়ু দূষণের দ্বারা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তবে কাজের স্মৃতি প্রভাবিত হয়নি, যা এই ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিষ্কের কিছু কার্যাবলী স্বল্পমেয়াদী দূষণের সংস্পর্শে তুলনামূলকভাবে প্রতিরোধী।
সহলেখক ড. টমাস ফাহের্টি উল্লেখ করেছেন যে গবেষণাটি এই প্রমাণ সরবরাহ করে যে, স্বল্পমেয়াদী পার্টিকুলেট ম্যাটারের সংস্পর্শও মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় কার্যাবলীর উপর তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অধ্যাপক ফ্রান্সিস পোপ জোর দিয়ে বলেছেন যে দূষিত বাতাস মেধার বিকাশ ও কর্মক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে, যার প্রভাব পড়ে বৃহত্তর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। তিনি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব মোকাবেলার জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেছেন, বিশেষত অত্যন্ত দূষিত শহুরে এলাকাগুলিতে।
গবেষণাটি আরও জোর দিয়ে বলেছে যে দূষণের বিভিন্ন উৎস কিভাবে বোধবুদ্ধি সংক্রান্ত কার্যাবলীর (cognitive functions) উপর প্রভাব ফেলে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলির বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ মানবস্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রধান পরিবেশগত ঝুঁকি। তা অকাল মৃত্যুর কারণ এবং কার্ডিওভাসকুলার (cardiovascular), শ্বাসতন্ত্রীয় এবং স্নায়ুর ক্ষয়জনিত অবস্থাকে প্রভাবিত করে। সার্বিকভাবে, গবেষণাটি বোধবুদ্ধি সংক্রান্ত কার্যাবলীর সুরক্ষা ও সার্বিক জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য জরুরি ভিত্তিতে কঠোর বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =