
না, আশ্চর্যজনক আবির্ভাব নয়! বরং মানবপ্রজাতির উদ্ভব, প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফল। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা দীর্ঘদিনের “কঠিন সোপান ” তত্ত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এর পরিবর্তে, পেন স্টেট থেকে গবেষকরা প্রস্তাব করেছেন যে মানব বিবর্তন, বিবর্তনের ধারা মেনে সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে। “জটিল প্রাণের বিবর্তন হয়তো সৌভাগ্যের চেয়ে জীবন এবং তার পরিবেশের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার সাথেই বেশি সম্পর্কিত। এটি আমাদের উৎপত্তি এবং মহাবিশ্বে আমাদের স্থান বোঝার জন্য নতুন এবং কৌতূহলী গবেষণার পথ খুলে দিচ্ছে।” পেন স্টেটের জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং গবেষণাপত্রের সহ-লেখক জেসন রাইট একথা বলেছেন।
১৯৮৩ সালে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ব্র্যান্ডন কার্টার প্রথম এই কঠিন সোপান (“হার্ড স্টেপস”) মডেলটির প্রস্তাব করেন। এই মডেল অনুযায়ী, বিবর্তনের পথে মানুষের উৎপত্তি হওয়া অসম্ভব ছিল। তিনি বলেন, সূর্যের মোট জীবনকাল ১০ বিলিয়ন বছর। সেখানে পৃথিবীর বয়স প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর। মানুষের বিবর্তনে যে সময় লেগেছে তা সূর্যের মোট জীবনকালের তুলনায় অনেক বেশি। মহাবিশ্বের অন্যত্র মানুষের মতন বুদ্ধিমান প্রজাতির অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জিওবায়োলজির বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন গবেষণা দল যুক্তি দিয়েছে যে এই দৃষ্টিভঙ্গি অসম্পূর্ণ।
নতুন গবেষণায়, “বাসযোগ্যতার দিগন্ত ” মডেলের মাধ্যমে জানা যায় যে পৃথিবীর পরিবেশ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের জীবনের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এই উইন্ডো বা দিগন্তগুলি ক্রমানুসারে উম্মুক্ত হয় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। এর জন্য দায়ী নানা কার্যকারণ। যেমন অক্সিজেনের মাত্রা, পুষ্টির লভ্যতা, সমুদ্রের লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রা সহ বিভিন্ন উপাদান। জটিল জীবনের উদ্ভব হয়েছে পরিবেশগত অবস্থা অনুকূল হওয়ার সাথে সাথে একটি পূর্বাভাসযোগ্য প্যাটার্ন অনুসরণ করে। গবেষণায় পদার্থবিদ এবং জিওবায়োলজিস্টরা একে অপরের ক্ষেত্র থেকে শিক্ষা নিয়েছেন । পৃথিবীর মতো একটি গ্রহে জীবন কীভাবে বিবর্তিত হয় তার একটি সূক্ষ্ম চিত্র তৈরি করেছেন । গবেষকরা যুক্তি দেখান, মানুষ খুব তাড়াতাড়ি বা দেরি করে বিবর্তিত হয়নি। বরং “সঠিক সময়ে” উপযুক্ত পরিস্থিতি মেনেই তাদের বিবর্তন ঘটেছে। এটিই প্রমাণ যে অন্য গ্রহগুলিতেও অনুরূপ বিবর্তন প্রক্রিয়া ঘটতে পারে। যদিও সম্ভবনার হার ভিন্ন হতে পারে। “যদি জীবন গ্রহের সাথে বিবর্তিত হয়, তাহলে এটি গ্রহের সময়কালে গ্রহের গতিতে বিবর্তিত হবে।” দলটি বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের মডেল পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছে। যার মধ্যে রয়েছে বহি:গ্রহ (এক্সোপ্ল্যানেট) বায়ুমণ্ডলে জীবনের চিহ্ন খোঁজা এবং বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থায় ‘জীবন’ কীভাবে অভিযোজিত হয় তা অধ্যয়ন করা।
“এই গবেষণাপত্রটি আন্তঃবিষয়ক কাজের সবচেয়ে উদার নিদর্শন,” ম্যাকালাডি বলেছেন। ‘অসম্ভব ঘটনা’ নয়, বিবর্তন হয়তো অনেক বেশি পূর্বাভাসযোগ্য একটি প্রক্রিয়া। বিবর্তনের এই ধারা শুধু পৃথিবীর ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য গ্রহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যা অন্য গ্রহেও মানুষের মতো জীবন থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।