কলা শামুকের জিনোম

কলা শামুকের জিনোম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ইউসি সান্টা ক্রুজের গবেষকরা সুপরিচিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কলা শামুকের জিনোম (জীবের সম্পূর্ণ ডিএনএর সেট) এই প্রথম
সফলভাবে নির্ণয় করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার রেডউড বনের হলুদ রঙের এই সুপরিচিত প্রাণীটি সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শামুক। এই শামুকরা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আলাস্কা পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিমের উপকূলীয় বনে বাস করে।এদের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন শিকারীদের জিভ অসাড় করতে পারার মতো আঠালো শ্লেষ্মা নির্গত করার ও স্ব-নিষেকের ক্ষমতা। এই প্রকল্পটি ক্যালিফোর্নিয়ার 230টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জন্য রেফারেন্স জিনোম তৈরির একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। গবেষণাটি জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় সংরক্ষণের সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ক্যালিফোর্নিয়ায় কলা শামুক নিয়ে গবেষণা করে জানতে পারেন কীভাবে এরা পরিবেশের সাথে সংযুক্ত। যেহেতু এরা খুব বেশি নড়াচড়া করে না, তাই যেখানে বাস করে সেখানকার জলবায়ুর প্রতিনিধিত্ব করে। অধ্যাপক করবেট-ডেটিগের নেতৃত্বে গবেষকরা কলা শামুকের তিনটি প্রধান দল খুঁজে পেয়েছেন । বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ক্যালিফোর্নিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের বেশ কয়েকটি কলার শামুকদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিন্তু এখনো এদের জিনগত পার্থক্য স্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন এরা ‘সেলফিং’ নামক স্ব-নিষেক ক্ষমতার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। গবেষক ম্যাক্স জেনেটি বলেছেন, এরা কতবার একে অপরের সাথে মিলিত হচ্ছে নাকি কেবল নিকটাত্মীয়দের সাথে বা নিজের সাথে প্রজনন করছে তা বলা কঠিন। ইউসি সান্টা ক্রুজে উজ্জ্বল হলুদ কলা শামুকগুলি হল অ্যারিওলিম্যাক্স ডলিচোফ্যালাস নামক একটি ছোট প্রজাতি। এগুলিকে সাধারণত মধ্য এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা প্রথমে কলা শামুকের ডিএনএর বিন্যাস ক্রম তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু চটচটে পদার্থের উপস্থিতির কারণে কাজটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এজন্য তারা কলা শামুকের সম্পূর্ণ জিনোমের ( সমস্ত জিনগত তথ্য) ক্রমবিন্যাস করার চেষ্টা করেন। এর ফলে প্রজাতির জিনগত তথ্যের প্রতিটি ক্রোমোসোমকে ত্রুটিহীন ও বিশদভাবে বর্ণনা করা যায়। তারা এই প্রচেষ্টাকে ক্যালিফোর্নিয়া সংরক্ষণ জিনোমিক্স প্রকল্পের সাথে যুক্ত করেছিলেন। বিজ্ঞানীরা মূলত ক্যালিফোর্নিয়া জুড়ে ১০০ টিরও বেশি আলাদা কলা শামুক থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন।
কলার শামুকের শ্লেষ্মা জটিল হওয়ায় ডিএনএ বের করা কঠিন । কিন্তু গবেষকরা সফলভাবে এর ক্রম (সিকোয়েন্স) নির্ণয় করে একটি পাঠযোগ্য রেফারেন্স জিনোমে একত্রিত করেছিলেন । কলার শামুকের জিনোমের আকার ২.৩ গিগাবেস , যা মানুষের জিনোমের(৩.৪ গিগাবেস ) আকারের কাছাকাছি। এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ রসায়নিক ও অধিবিষাক্ততার বৈশিষ্ট্য বোঝা যাবে। করবেট-ডেটিগের গবেষক দল ক্যালিফোর্নিয়ায় কলা শামুকের জনসংখ্যার তিনটি প্রধান গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেছে। একটি সান্টা ক্রুজের চারপাশে কেন্দ্রীয় উপকূল বরাবর, দ্বিতীয়টি দক্ষিণ উপকূলে এবং বৃহত্তম গোষ্ঠীটির বাস উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে ওরেগন সীমান্ত এবং পূর্বে সিয়েরা নেভাডাস পর্যন্ত ।
ক্যালিফোর্নিয়ার কলা শামুকের উপর জিনগত গবেষণা থেকে তিনটি গোষ্ঠীর মধ্যে বৈচিত্র দেখা গেছে । গবেষকরা শামুকগুলির শ্লে ষ মা র বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করে আরও ভালোভাবে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + five =