
জলের নিচে রোবটের চলাচল ক্ষমতাকে ব্যবহার করে সমুদ্রকে অধ্যয়ন করা এবং সুরক্ষার কাজ করা সম্ভব । চ্যাপ্টা কৃমির আদলে তৈরি বিপুল সম্ভাবনাময় এই রোবটগুলি আকারে অনেক ছোটো।এগুলি আমাদের দূষণের মান বুঝতে, প্রবাল প্রাচীর পর্যবেক্ষণ করতে এবং বিশাল জলস্তরের নিচের জগত অনুসন্ধান করতে সাহায্য করে।তবে, জলের ভেতরে যন্ত্রগুলির শব্দময় প্রোপেলার থেকে উৎপন্ন কোলাহল সামুদ্রিক জীবনকে বিরক্ত করতে, এমনকি তাদের ক্ষতিও করতে পারে। উদ্ভিদ, প্রাণী এবং ধ্বংসাবশেষের মতো প্রাকৃতিক বাধার কারণে জলজ রোবটরা জলের মধ্যে চলাচলের সমস্যার মুখোমুখি হয়। বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যাগুলির একটি অভিনব সমাধান নিয়ে এসেছেন । তারা একটি আঁটসাঁট, চটপটে রোবট তৈরি করেছেন যা সংকীর্ণ কোণে চলাচল করতে এবং নিজের চেয়ে অনেক ভারী বোঝা বহন করতে সক্ষম।এই রোবটটি আকারে একটি ক্রেডিট কার্ডের চেয়েও ছোট ,ওজন মাত্র ৬ গ্রাম।এটি ধানক্ষেতের মতো সংকীর্ণ স্থানে যন্ত্রপাতি পরিদর্শন এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র অধ্যয়নের জন্য উপযোগী ।
ইপিএফএল-এর ‘সফট ট্রান্সডিউসার ল্যাবের’ প্রধান হারবার্ট শিয়া জলজ রোবট তৈরির অসুবিধা সম্পর্কে বলেছেন, জল-রোবট তৈরি করা অন্য রোবট তৈরির চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। এজন্য বিজ্ঞানীদের নতুন, শক্তিশালী নরম ‘অ্যাকচুয়েটর’ তৈরি করতে হয়েছিল যা রোবটকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। রোবটটিকে তরঙ্গের গতিতে চালিত করার জন্য নতুন উপায় বের করা হয়েছিল, ক্ষুদ্র, শক্তিশালী ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়েছিল।
প্রপেলার ভিত্তিক ব্যবস্থার বিপরীতে, এই নতুন রোবটটি সামুদ্রিক চ্যাপ্টা কৃমির নড়াচড়ার মতো তরঙ্গায়িত পাখনা ব্যবহার করে চলাচল করে। এই হালকা, অভিনব রোবটটি জলের উপরিভাগে ভেসে পরিবেশের সাথে নির্বিঘ্নে মিশে যায়।ফ্লোরিয়ান হার্টম্যান ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা একটি রোবটিক সাঁতারু নির্মাণ করেছেন যা আসল সামুদ্রিক চ্যাপ্টা কৃমির তুলনায় অনেক দ্রুত চলে। তাদের রোবটের পাখনা এর তুলনায় ১০ গুণ পর্যন্ত দ্রুত নড়তে পারে, যা তাদের প্রতি সেকেন্ডে ১২ সেন্টিমিটার গতিতে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে। এই রোবটের নিরাপদ ও কম-বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। এটি চলাচলের জন্য বেশি ভোল্টেজ (500V) ব্যবহার করলেও খুব কম শক্তি খরচ করে। রোবটটিতে আলোর সুবেদি গ্রাহক থাকায় এটি নিজেই জলের নিচের আলোর উৎস চিহ্নিত ও অনুসরণ করতে পারে।গবেষকরা জল- রোবটটিকে আরও উন্নত করার জন্য ভাল সুবেদি গ্রাহক, দীর্ঘস্থায়ী তড়িৎকোষ এবং আরও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন ।তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতের সংস্করণ গুলিতে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রোবটগুলি নিজেরাই চলাচল করতে পারবে। রোবটগুলি সেচ পর্যবেক্ষণ এবং বন্যাগ্রস্ত ফসলে পুষ্টির সমস্যা পরীক্ষা করে কৃষকদের সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও জলের নলের ছিদ্র ও বায়ু খামারগুলিও পরিদর্শন করতে পারে।বিজ্ঞানীরা জলে প্রাণীদের চলাফেরা এবং বসবাসের অনুকরণ করে আরও ভালো জল- রোবট তৈরি করছেন । এটি সমুদ্রকে আরও সহজে, আরো ভালোভাবে অনুসন্ধান করতে ও আরও বুদ্ধিমান, পরিবেশ বান্ধব রোবট তৈরি করতে সহায়তা করছে ।