মৌমাছির নৃত্যবিভঙ্গ

মৌমাছির নৃত্যবিভঙ্গ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ মার্চ, ২০২৫

মৌমাছিরা অসাধারণ নৃত্যশিল্পী। তারা উপর নিচে ওঠানামা করে এবং এপাশ থেকে ওপাশে শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে বিভঙ্গ নৃত্য (waggle dance) নামে একটি বিশেষ ঢংয়ের নাচ করে। খাদ্যের সন্ধান পেলে শ্রমিক মৌমাছিরা মৌচাকের সামনে “8” অক্ষরটির ধাঁচে নাচ করে । এই নাচ অন্য মৌমাছিদের খাবারের উৎস খুঁজে বের করতে সাহায্য করে । এর মাধ্যমে অন্য মৌমাছিরা বুঝতে পারে তাদের কোন দিকে উড়তে হবে এবং কতদূর যেতে হবে। অন্যান্য মৌমাছিরা প্রথমে নাচ দেখে দিকনির্দেশনা শেখে, তারপর চাক ছেড়ে খাবার খুঁজতে উড়ে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে তারা খাবার খুঁজে পায় না। বিজ্ঞানীরা এর কারণ জানার চেষ্টা করছেন।গবেষণায় দেখা গেছে ‘বিভঙ্গ নৃত্য’ প্রায়শই মৌমাছিদের ভুল জায়গায় নিয়ে যায়। এই নাচটি অত্যন্ত জটিল। প্রতিটি মৌমাছির বিভঙ্গ নৃত্যর নিজস্ব কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন, যেসব মৌমাছি একইভাবে নাচে তারা কি অন্য মৌমাছিদের খাবারের উৎসে আকর্ষণ করতে বেশি সফল হয়? মূলত, তাঁরা দেখতে চান বিভঙ্গ নৃত্যর সাফল্য কি এই বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে? নাকি অন্য কিছু বিষয় মৌমাছিদের খাবারের অবস্থান খুজতে সাহায্য করে? এজন্য বিজ্ঞানী কুভিলন পরীক্ষাগারে স্বচ্ছ দেওয়াল যুক্ত মৌচাক তৈরী করে ভিতরে কী ঘটছে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা মৌমাছিদের চিহ্নিত করে তাদের গতিবিধি অনুসরণ করেছিলেন।প্রতিটি চাকের মধ্যে কিছু মৌমাছিকে কৃত্রিম খাদ্য উৎসের অবস্থান শেখানো হয়েছিল । প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা তারপর মৌচাকে ফিরে এসে বিশেষ বিভঙ্গ নৃত্য করে অন্য মৌমাছিদের খাবারের অবস্থান জানায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন যদি একই ধরনের নাচ করা মৌমাছিরা শেখানো ও শেখার ক্ষেত্রে বেশি দক্ষ হয়, তাহলে আরও বেশি মৌমাছি ভালোভাবে খাদ্য উৎস খুঁজে পাবে।তাঁরা চিহ্নিত মৌমাছি এবং মৌচাকের ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখেন কোন কোন মৌমাছি বাকিদের খাবারের উৎসে নিয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা সময়ের সাথে সাথে নাচের গতিবিধির পরিমাপ ও তুলনা করেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে, মৌমাছিরা নাচটি হুবহু নকল করার পরিবর্তে প্রতিবার সামান্য পরিবর্তন করে, একটি পরিবর্তনশীল ছাঁচ তৈরি করে।

বিজ্ঞানী কুভিলন এবং ম্যাকহেনরি আশা করেছিলেন একইরকম নাচের মাধ্যমে মৌমাছিরা আরও ভালোভাবে খাবার খুঁজে পাবে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায় যেসব মৌমাছিকে খাবারের উৎসের চেয়ে বেশি দূরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তারাই বেশি সফল হয়েছিল। হয়তো এর কারণ, তারা খাবার খুঁজে পাওয়ার দুটি সুযোগ পেয়েছিল – একবার খাবারের উৎসের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে, আবার ফিরে আসার পথে। গবেষণা থেকে বোঝা যায়, সব মৌমাছি একই ভাবে নাচলে খাদ্য সংগ্রহকারীদের খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন হত। এই বিভিন্ন নাচের ধরণই মৌমাছিদের আরো ভালোভাবে বার্তা বুঝতে ও যোগাযোগ করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ বৈচিত্র্যময় যোগাযোগই খাবার খোঁজার সাফল্যকে বাড়িয়ে তোলে।এই গবেষণা থেকে প্রমাণ হয়, এই ধরনের পতঙ্গগুলি এক অনন্য ধরণের সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ করে। প্রাণীকুলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে এ থেকে নতুন তথ্য জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 3 =