জীববৈচিত্র্য ও নেকড়ে

জীববৈচিত্র্য ও নেকড়ে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ মার্চ, ২০২৫

একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে স্কটল্যান্ডে নেকড়ে ফিরিয়ে আনলে বনভূমি পুনরুদ্ধার হতে পারে এবং জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণের পক্ষেও উপকারী হবে।
কয়েক সপ্তাহ আগে বিজ্ঞানীরা বিশ্বে জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে অনেক গাছপালা ও প্রাণী কমে যাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । একটি বাস্তুতন্ত্রে সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত থাকে। তাই একটির পরিবর্তন হলে তার প্রভাব অন্যগুলোর ওপরেও পড়ে।
এর একটি ভালো উদাহরণ হলো, স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ড এলাকায় নেকড়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ার ঘটনা। নেকড়েরা লাল হরিণ শিকার করে হরিণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বন সহজেই সম্প্রসারিত হতো ।কিন্তু ১৮ শতকে, মানুষের অত্যধিক শিকারের কারণে ব্রিটেনে নেকড়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়। নেকড়ে না থাকায়, হরিণের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এবং তারা অতিরিক্ত চারাগাছ খেয়ে ফেলে। এর ফলে গাছের চারা বেড়ে উঠতে না পারায় বনভূমি কমে যায়।ফলস্বরূপ, আজ স্কটল্যান্ডের মাত্র ৪ শতাংশ এলাকায় প্রাকৃতিক বনভূমি টিকে আছে।
স্কটল্যান্ডে কিছু এলাকায় হরিণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা আরেকটি বিকল্প উপায়ও খুঁজে বের করেছেন।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা স্কটিশ বনভূমিতে আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য একটি নকশা তৈরি করেছেন। তাঁরা মনে করেন বনভূমিতে মাত্র ১৬৭টি নেকড়ে পুনরায় নিয়ে আসলে, লাল হরিণের সংখ্যা কমে যাবে ও গাছগুলি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে।এটি শুধু স্কটল্যান্ডের বনভূমি পুনরুদ্ধারেই সাহায্য করবে না, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সাহায্য করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন গাছপালা প্রতি বছর ১০ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করবে, যা প্রতি নেকড়ে পিছু প্রায় ৬,০৮০ টন কার্বন গ্রহণের সমান।

এই গবেষণা প্রমাণ করে যে নেকড়ে ফিরিয়ে আনা বন পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। তবে সবাই এই ধারণার পক্ষে নয়। কৃষক ও শিকারিরা উদ্বিগ্ন, কারণ নেকড়ে গবাদি পশুর ক্ষতি করতে পারে এবং শিকার কমিয়ে দিতে পারে।
কিছু মানুষ নেকড়ে ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়েও চিন্তিত।
বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন নেকড়ে পুনঃপ্রবর্তনের আগে কৃষক, শিকারি ও সাধারণ মানুষের সাথে আলোচনা করা জরুরি। তবে এই গবেষণা যেসমস্ত তথ্য দিয়েছে তাতে ভবিষ্যতে নেকড়ে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এটি বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে নেকড়ের ভূমিকা বুঝতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + eight =