বিবর্তন এবং বিবর্তনশীলতা

বিবর্তন এবং বিবর্তনশীলতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ মার্চ, ২০২৫

লক্ষ-কোটি বছর ধরে, বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে জীবন গঠিত হয়ে চলেছে। জীবন্ত অণুরা টিকে থাকার জন্য সহায়ক বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়।
কিন্তু বিবর্তনের ধারা নিজেই কি সময়ের সাথে বিবর্তিত হতে পারে? মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউ-এম) একটি নতুন গবেষণা, এই ধারণাটিকেই ঘিরে অনুসন্ধান চালিয়েছে । এই গবেষণা থেকে দেখা গেছে , বিবর্তন কেবল যে ঘটে তাই নয় – বিবর্তন নিজেকে আরও উন্নত করে। বিবর্তনশীলতা
(“ইভলভেবিলিটি”) নামে অভিহিত এই প্রক্রিয়াটি এমন একটি সক্ষমতা যা জীবন্ত অণুরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাড়িয়ে চলতে পারে। ইউ-এম-এর বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী লুইস জামান এই ধারণাটিকে অত্যন্ত ‘আকর্ষক ‘ বলে মনে করেন। বিবর্তনের বিভিন্ন তত্ত্ব মূলত কেন্দ্রীভূত থাকে জীবন্ত অণুর পরিবেশে অভিযোজন বৃদ্ধি করার ওপর । একটি সুবিধাজনক মিউটেশন জীবন্ত অণুটিকে টিকে থাকার সুবিধা করে দেয়। সেই বৈশিষ্ট্যগুলি তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যায়। বিবর্তনশীলতা জিনিসটি কিন্ত ভিন্ন। এটি সরাসরি অভিযোজনের উপর কেন্দ্রীভূত থাকে না। বরং, ভবিষ্যতে একটি জীবন্ত অণুর নতুন চ্যালেঞ্জগুলির সাথে মানিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাকে এটি বাড়িয়ে তোলে। জামান ব্যাখ্যা করেন, “বিবর্তনশীলতার এই অগ্রগামী বৈশিষ্ট্যটি বিতর্কিত। আমরা মনে করি এটি গুরুত্বপূর্ণও বটে । আমরা জানি এটি ঘটে, কিন্তু কেন এবং কখন ঘটে তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট”।
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে, গবেষকরা সিমুলেশন ভিত্তিক মডেল ডিজাইন করেন। তারা জানতে চেয়েছিলেন কোনো জীবগোষ্ঠী, পরিবর্তনশীল পরিবেশের মুখোমুখি হলে উন্নত অভিযোজন ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে কি না। তারা পরীক্ষার জন্য কেবলমাত্র বঁইচি জাতীয় ফল খাওয়া জীবগোষ্ঠীকে উদাহরণ হিসাবে বেছে নেন। এক্ষেত্রে লাল বঁইচি উপকারী, কিন্তু নীল বঁইচি বিষাক্ত। সুতরাং একটি জনগোষ্ঠীর এই দুই অবস্থার মধ্যে একটি সময়ে, শুধু একটি মাত্র অবস্থাতেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা । কিন্তু বিবর্তনশীলতার সাহায্য নিয়ে, তাদের এমন সব বৈশিষ্ট্যর বিকাশ ঘটে, যা তাদের উভয় অবস্থাতেই টিকে থাকতে সাহায্য করে। এই গবেষণা থেকে আরও দেখা যায়, জীবন্ত অণুরা কেবল যে তাদের বর্তমান পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে তাই নয় – তারা ভবিষ্যতের পরিবর্তনের জন্য আরও কার্যকরভাবে অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতাও গড়ে তুলছে। গবেষকরা আরও তদন্ত করে দেখেছেন কিভাবে পরিবেশগত পরিবর্তনের সময়সীমা বিবর্তনশীলতাকে প্রভাবিত করে। তারা তিনটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করেছেন : প্রথম , পরিবেশ প্রতিটি প্রজন্মে পরিবর্তিত হচ্ছে; দ্বিতীয়, পরিবেশ দশ প্রজন্ম পর পর পরিবর্তিত হচ্ছে , এবং তৃতীয়, যেখানে তা শত প্রজন্ম পরে পরিবর্তিত হয়। তাঁরা দেখেন যে, যখন পরিবেশ খুব দ্রুত বদলায় , তখন জীব গোষ্ঠীগুলি বিবর্তনশীলতা গড়ে তুলতে যথেষ্ট সংগ্রাম করে। এই গবেষণা থেকে দেখা যায়, কিভাবে বিবর্তন সময়ের সাথে সাথে নিজের বিকাশ ঘটাতে পারে এবং পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে অভিযোজনে আরও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। এখন বড় প্রশ্ন হলো, যদি বিবর্তনশীলতা বিবর্তনশীল হয়, তবে কিভাবে জীবনের ধারাবাহিকতা এবং বৈচিত্র্য কোটি কোটি বছর ধরে টিকে রয়েছে। আসলে, যেসব জীবন্ত অণু বৃহত্তর অভিযোজন ক্ষমতা গড়ে তোলে, তারা হয়তো স্বল্পমেয়াদী টিকে থাকার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অণুদের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা পায়। গবেষণাটি, ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − five =