স্কিজোফ্রেনিয়া রোগনির্ণয়ের নতুন পন্থা?

স্কিজোফ্রেনিয়া রোগনির্ণয়ের নতুন পন্থা?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ মার্চ, ২০২৫

ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা, ম্যাসাচুসেটস এবং জার্মানির গবেষক দলের সাথে মিলে একটি জেনেটিক মিউটেশন শনাক্ত করেছেন যা ইঁদুরের মধ্যে স্কিজোফ্রেনিয়া-সম্পর্কিত আচরণের সাথে যুক্ত। এই গবেষণাটি মলিকিউলার সাইকিয়াট্রি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এটি সিজোফ্রেনিয়া রোগের সাথে সরাসরি জেনেটিক সংযোগের প্রমাণ দেয় , যা একটি বিরল ঘটনা। গবেষণায় দুজন স্কিজোফ্রেনিয়া রোগীর মধ্যে পাওয়া একটি মিউটেশন নিয়ে চর্চা করা হয়েছে, যা গ্লাইসিন ডিকার্বক্সিলেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বাড়ায়। এই এনজাইম মস্তিষ্কে গ্লাইসিন নিয়ন্ত্রণ করে, যা এন এম ডি এ নামক রিসেপ্টরকে সক্রিয় করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রিসেপ্টর গুলি গ্লুটামেট সংকেত প্রেরণ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য।
এই মিউটেশনের ফলে জি এল ডি সি নামক জিন ধারণকারী ডি এন এ অংশের একাধিক কপি তৈরি হয়। এর ভূমিকা বুঝতে গবেষকরা একই মিউটেশনযুক্ত ইঁদুর তৈরি করেন, যারা স্কিজোফ্রেনিয়া -সম্পর্কিত আচরণ প্রদর্শন করে। পরবর্তী পরীক্ষায় দেখা যায় যে শুধুমাত্র জি এল ডি সি জিনের অতিরিক্ত কপিই এই লক্ষণগুলির জন্য দায়ী। মজার বিষয় হলো, মস্তিষ্কে সামগ্রিক গ্লাইসিনের মাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও, একটি বিশেষ অঞ্চলে স্নায়ু কোষের বাইরে গ্লাইসিনের প্রাপ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, যা এন এম ডি এ রিসেপ্টরের কার্যকারিতা ব্যাহত করে।
জার্মান গবেষকদের সহযোগিতায়, গবেষক দলটি উন্নত গ্লাইসিন ট্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এই স্থানীয় ঘাটতি শনাক্ত করেন। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সাথে করা গবেষণায় দেখা যায় যে মস্তিষ্কর ওই বিশেষ অঞ্চলে এমন কিছু কার্যকলাপ হ্রাস পায়, যা কঠিন মনোরোগ বিকাশের তত্ত্বের সাথে মিলে যায়। বায়োকেমিক্যাল বিশ্লেষণে আরও দেখা যায় যে জি এল ডি সি-র বৃদ্ধি, এন এম ডি এ রিসেপ্টরের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং স্কিজোফ্রেনিয়া-সম্পর্কিত পথগুলিকে পরিবর্তিত করে।
গবেষক উই রুডলফ এই বিরল জেনেটিক সংযোগের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং উল্লেখ করেন যে স্কিজোফ্রেনিয়া সাধারণত লক্ষণের ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয়, ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে নয়। কিন্তু এই গবেষণা জি এল ডি সি -কে, এন এম ডি এ রিসেপ্টরের একটি নতুন নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করে, যা শেখা, স্মৃতি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই গবেষণা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ, শার্ভার্ট ফ্রেজিয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্ট্যানলি সেন্টার ফর সাইকিয়াট্রিক রিসার্চ এবং হার্ভার্ড ব্রেইন সায়েন্স ইনিশিয়েটিভের আ নু কূ ল্যে চালিত হয়েছিল। এই আবিষ্কার স্কিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত রোগ নির্ণয়ের নতুন পন্থা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির পথ প্রশস্ত করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 17 =