স্থূলতার সূত্রপাত মস্তিষ্কে

স্থূলতার সূত্রপাত মস্তিষ্কে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ মার্চ, ২০২৫

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সারা বিশ্বে মানুষের মোটা হয়ে যাওয়ার মাত্রা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।এটি মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক সমস্যা তৈরি করছে। ইনসুলিন নামক হরমোনটি মুটিয়ে যাওয়ার এক বড় কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ইনসুলিন মস্তিষ্ক ও শরীরের বিপাকীয় সমস্যার সাথে জড়িত। জার্মানির কিছু প্রতিষ্ঠানের একটি নতুন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে স্থূলতা আর টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অব ট্যুবিনজেন, জার্মান সেন্টার ফর ডায়াবেটিস রিসার্চ (DZD) এবং হেল্মহলৎস মিউনিখ-এর একটি গবেষণা থেকে স্থূলতা ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কের ভূমিকা সম্পর্কে নতুন ধারণা লাভ করা গেছে। জার্মানি ২০২০ সালে স্থূলতাকে একটি রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অনেক আগেই জানা গেছে এটি ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং ক্যানসারের মতো রোগের কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্থূলতাকে মহামারী আখ্যা দিয়েছে। স্থূলতা সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষকে এবং জার্মানিতে প্রায় ১কোটি ৬০ লক্ষ মানুষকে আক্রান্ত করেছে। যখন কারও দেহ- ভার সূচক (বিএমআই) ৩০ বা তার বেশি হয়, তখন তাকে স্থূল বা মোটা বলা হয়। সাধারণত খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভাবকে এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। তবে, শরীরের ভেতরের কিছু জটিল প্রক্রিয়াও এর জন্য দায়ী। অতিরিক্ত চর্বি ও ওজন বৃদ্ধির সাথে মস্তিষ্কে ইনসুলিনের ক্রিয়া জড়িত থাকে।ট্যুবিনজেন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষক অধ্যাপক স্টেফানি কুলমান ও অন্যান্য গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন ইনসুলিন মস্তিষ্কে কী করে ও এটি সাধারণ ওজনের মানুষের ওপর কী প্রভাব ফেলে। অধ্যাপক কুলমানের মতে, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কিছুদিন ধরে চকলেট বা চিপস এর মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে সুস্থ মানুষের মস্তিষ্কে বড় পরিবর্তন দেখা দেয়। এর কারণে স্থূলতা ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে। সাধারণত, সুস্থ শরীরে ইনসুলিন খিদে কমিয়ে দেয়। স্থূল মানুষের শরীরে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করে না, ফলে তারা ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়ে যায়। অধ্যাপক কুলমানের মতে গবেষণায় দেখা যায় সুস্থ মানুষও কয়েকদিন বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে তাদের মস্তিষ্কে ইনসুলিনের প্রভাব কমে যায়, ঠিক যেমনটা স্থূল মানুষের ক্ষেত্রে হয়। এমনকি এক সপ্তাহ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরও এই পরিবর্তন থেকে যায়। অধ্যাপক ড. আন্দ্রেয়াস বিড়কেনফেল্ড জানান ওজন বাড়ার আগেই মস্তিষ্কের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া খাবারের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়, যা স্থূলতা ও অন্যান্য রোগের কারণ হতে পারে।মস্তিষ্ক কীভাবে স্থূলতা ও অন্যান্য রোগে ভূমিকা রাখে এই বিষয় গুলি বোঝার জন্য তিনি আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। একটি গবেষণায় ২৯ জন সাধারণ ওজনের পুরুষ অংশ নেন। তাদের দুই দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলকে ৫ দিন ধরে প্রতিদিন ১৫০০ অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার (যেমন চিপস বা চকলেট) খেতে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দল অতিরিক্ত খাবার খায়নি। পরীক্ষাটি তিন ধাপে হয়—প্রথমে সবাইকে সাধারণ পরীক্ষা করা হয়, তারপর ৫ দিনের শেষে একটি পরীক্ষা হয়, এবং এক সপ্তাহ পর, যখন প্রথম দল স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসে, তখন আরেকটি পরীক্ষা করা হয়। গবেষকরা এম আর আই এর সাহায্যে লিভারের ফ্যাটের পরিমাণ এবং মস্তিষ্কর ইন্সুলিন -সংবেদনশীলতা পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা যায় পাঁচ দিন বাড়তি ক্যালরি খাওয়ার পর প্রথম দলের ফ্যাট মাত্রা উল্লেখযোগ্য রূপে বেড়ে যায়। শুধু তাই নয় , কন্ট্রোল গ্ৰুপের সঙ্গে তুলনায় তাদের কম ইন্সুলিন সংবেদনশীলতাও পাঁচ দিন ধরে বাড়তি ক্যালরি খাওয়ার পরেও বজায় থাকে। আগে এই ক্রিয়া কেবল স্থূল লোকদের মধ্যেই দেখা যেত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =