
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেশাদার শিল্পীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সহায়তা নিয়ে সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি সৃজনশীল শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারেন। ডিউক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং প্রধান গবেষক ড. পল সেলি বলেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উন্নতি সৃজনশীলতার প্রকৃতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। প্রধান গবেষক পল সেলি মনে করেন সৃজনশীলতা হল মানুষের এক বিশেষ দক্ষতা যা অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও ভাব প্রকাশের ইচ্ছার সাথে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করতে করা সম্ভব হচ্ছে । এখানেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে মানুষই এখনো অব্দি এগিয়ে,? নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিশীলতার ধারণাই বদলে দিচ্ছে? গবেষণা অনুযায়ী, সৃষ্টিশীলতার দিক দিয়ে এখনো পেশাদার শিল্পীরাই এগিয়ে আছেন। গবেষণার এই ফলাফল ‘সাইকোলজি অফ ইস্থেটিকস, ক্রিয়েটিভিটি, অ্যান্ড আর্টস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একটি গবেষণায় গবেষকরা পাঁচ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ১৫ জন পেশাদার শিল্পীকে বেছে নেন। পাশাপাশি, ১৫ জন সাধারণ মানুষকেও বেছে নেওয়া হয়, যাদের শিল্পকলা শেখার অভিজ্ঞতা কম বা একদম নেই । সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের ১৫ শব্দের মধ্যে কিছু নির্দেশনা লিখতে দেওয়া হয়। , যা ডাল-ই ৩ (DALL-E 3) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা -এ ছবি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও, একই ধরনের নির্দেশনা ১৫ বার চ্যাট জিপিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা -কেও দেওয়া হয়। চ্যাট জিপিটির তৈরি নির্দেশনা পরে ডাল-ই ৩( DALL-E 3) ব্যবহার করে ছবি বানানোর কাজে লাগে। একটি গবেষণায় ২৯৯ জন মানুষকে ৪৫টি নানা ধরনের শিল্পকর্ম দেখানো হয়। এগুলো কতটা সৃজনশীল তা মূল্যায়ন করেন তারা। পেশাদার শিল্পীদের নির্দেশনায় তৈরি শিল্পকর্মকে সবচেয়ে সৃজনশীল মনে করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা -র তৈরি ছবি তুলনামূলকভাবে কম সৃজনশীল ছিল । আর নতুন শিল্পীদের কাজকে সবচেয়ে কম সৃজনশীল মনে করা হয়েছে। গবেষণা থেকে জানা গেছে পেশাদার শিল্পী ও চ্যাট জিপিটি ছবি তৈরির জন্য বেশি সংখ্যক শব্দ ব্যবহার করেছে, যেকারণে ছবিগুলো আরও সৃজনশীল হয়েছে।পেশাদার শিল্পীরা এমন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেগুলো একে অপরের সঙ্গে কম সম্পর্কিত। গবেষকরা এটিকে “সেমান্টিক ডিস্ট্যান্স” (শব্দ -অর্থ ঘটিত দূরত্ব )বলেছেন। মুলত ,শব্দের এই ভিন্নতা সৃজনশীলতা বাড়ায়। যেমন , এক পেশাদার শিল্পী নির্দেশনা দেন “টয়লেট পেপারের তৈরি জ্যাকেটে বন্দি এক পাগল”, যা অদ্ভুত ও কল্পনাপ্রবণ। অন্যদিকে, এক নতুন শিল্পীর নির্দেশনা ছিল “একটি ব্যাঙ পাতাকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করছে”, যা সাধারণ ও স্বাভাবিক। গবেষক সেলি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সত্যিই সৃজনশীল কি না, তা নির্ভর করে সৃজনশীলতা বলতে আমরা কি বুঝি তার ওপর । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন সব ছবি ও কাজ তৈরি করতে পারে, যা দেখতে সৃজনশীল মনে হয়। কিন্তু সৃজনশীলতা বলতে যদি মানুষের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও চিন্তার গভীরতা বোঝায়, তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। পেশাদার ও নতুন শিল্পীরা আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেননি। যদি তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থাকতো বা তারা ছবি তৈরির নির্দেশনা ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারতেন,তাহলে তাদের কাজ আরও ভালো ও সৃজনশীল হতে পারতো। গবেষকরা বলেন, এই গবেষণায় পেশাদার শিল্পীরা ভালো ফল করেছেন । কিন্তু সমসাময়িক বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে দ্রুত উন্নতি করছে তাতে ভবিষ্যতে এটি আরও শক্তিশালী ও সহজ হলে শিল্পীদের জন্য মৌলিক শিল্পচর্চার পথ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।