
জেরেমি বেন্থামের মতন কিছু দার্শনিক এবং খোদ চার্লস ডারউইন উনিশ শতকের মধ্যভাগে, পশুদের চেতনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সে সময় জন স্টুয়ার্ট মিল চেতনার ব্যাপক মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে অন্তরায় স্বীকার করেছিলেন। একুশ শতাব্দীতেও, এই চেতনার একটি সুনিশ্চিত তত্ত্ব এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পশু জগতে চেতনার সীমা নিয়ে মতপার্থক্য ও অনিশ্চয়তা রয়েছে। গবেষকদের একটি দল পশু চেতনা বোঝার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির কথা বলেন—যা জীবন্ত প্রাণীদের মধ্যে সাদৃশ্য এবং পার্থক্য সম্পর্কে নতুন তথ্য দেয়। পশু চেতনা মূল্যায়নের জন্য তাঁরা একটি “মার্কার পদ্ধতি” বা আচরণ-চিহ্নক উপস্থাপন করেন। এই গবেষণাটি মূলত দুটি দিক দেখার চেষ্টা করে। এক, সচেতন অবস্থায়, মানুষের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সাথে সম্পর্কিত আচরণগত এবং শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যগুলিকে চিহ্নিত করা। অন্যদিকে পশু প্রজাতিতে অনুরূপ বৈশিষ্ট্য আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। পশু চেতনা সম্পর্কিত এই জ্ঞান, চেতনার প্রকৃতি সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্নগুলি সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, মানব মনকে আরও ভালোভাবে বুঝতেও এটি খুব সহায়ক হতে পারে। মানুষ এবং অন্যান্য পশুরা অনেক সময়ে একই রকম আচরণ করে । যেসব ক্ষেত্রে, মানুষের মধ্যে কোনো একটা আচরণের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা সহ সচেতন অভিজ্ঞতা জড়িত থাকে, সেই একই ধরণের আচরণের ক্ষেত্রে পশুদের মধ্যেও অনুরূপ সচেতন অভিজ্ঞতা কাজ করে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই প্রকাশনা “পশু চেতনা সম্পর্কে নিউ ইয়র্ক ঘোষণা”-র প্রায় এক বছর পরে এসেছে। এটি সকল মেরুদণ্ডী এবং অনেক অমেরুদণ্ডী প্রাণীসহ বিভিন্ন প্রজাতির চেতনাকে বৈজ্ঞানিক সমর্থন জানায়। অ্যান্ড্রুজ, বার্চ, এবং সেবো দ্বারা সংগঠিত এই ঘোষণাপত্রে এখন বিশ্বব্যাপী ৫০০ এরও বেশি বিজ্ঞানী এবং অন্যান্য গবেষক স্বাক্ষর করেছেন, গবেষণার স্বার্থে। প্রবন্ধে এই তিন বিজ্ঞানী একটি পদ্ধতির বর্ণনা দিয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে “চেতনার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা চিহ্নিত করা”। যেমন ব্যথা অনুভব বা কোনো বস্তু দেখে সে বিষয়ে কি ধরনের চিহ্নক প্রজাতিগুলির মধ্যে উপস্থিত বা অনুপস্থিত- তার প্রমাণ খোঁজা। তারা নতুন অনুসন্ধানের দিকগুলিকেও আহ্বান জানান। যার মধ্যে, ব্যথার অভিজ্ঞতা ছাড়াও চেতনার অন্যান্য মাত্রাকেও পদ্ধতির অন্তর্গত করা হয়।তবে, তারা স্বীকার করেন যে একক চিহ্নকগুলির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। “একটি নির্দিষ্ট চিহ্নক পশু চেতনার নির্দিষ্ট মাত্রাগুলিতে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বা কমাতে পারে কিনা তা আসলে প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে,” তারা জানান। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভাষাগত আচরণ, মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের সচেতন চিন্তা এবং আবেগের একটি চিহ্নক। কৃ বু চালিত লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলি মানুষের কথোপকথন অনুকরণ করে । কিন্তু এগুলি পশুদের ক্ষেত্রে চেতনার শক্তিশালী প্রমাণ নাও হতে পারে। এইসব সমস্যা সত্ত্বেও, লেখকরা ‘পন্থা খোঁজা’র উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সকল মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং অনেক অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে চেতনার একটি ‘বাস্তবসম্মত মিল’ আছে – এই ধারণাটি হয়তো পরবর্তীতে আরও বেশি করে প্রমাণিত হবে। তারা উপসংহার টানেন, যতক্ষণ প্রমাণ সীমিত এবং মিশ্র, ততক্ষণ এ বিষয়ে খোলা দৃষ্টিভঙ্গি রাখা এবং এ বিষয়ে আরও জানার ‘অন্তত চেষ্টা’ করাটা গুরুত্বপূর্ণ।