বিলুপ্তির দোরগোড়ায় উত্তরের সাদা গণ্ডার

বিলুপ্তির দোরগোড়ায় উত্তরের সাদা গণ্ডার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ অক্টোবর, ২০২১

শেষ দুই নারী সদস্য বেঁচে আছে কেবল। ফলে ধরা যায় বিলুপ্তির প্রাক লগ্নে দাঁড়িয়ে আছে ‘উত্তরের সাদা গণ্ডার’। প্রসঙ্গত আফ্রিকার মধ্য অংশে বিচরনরত গণার বলে ‘উত্তরের’ শব্দটি ব্যবহৃত। কারন বাকি বিচরণ ভূমি নিম্নে বা দক্ষিণে। সাদা বলা কারণটিও অদ্ভুত। ওলন্দাজরা উপনিবেশ তৈরির সময় বলতো ওয়াইজড। পরে ইংরেজরা উপনিবেশ গড়তে রলে ওয়াইজড কে ভাবত হোয়াইট। সেই থেকে সাদা। গায়ের রঙ যদিও ধুসর তবু নাম উত্তরের সাদা গণ্ডার। ‘উত্তরের সাদা গণ্ডারের’ বাস ছিল উত্তর-পশ্চিম উগাণ্ডা, দক্ষিণ সুদান, মধ্য আফ্রিকার পূর্বাংশ, এবং কঙ্গোর উত্তর – পূর্বাংশে। বিশ শতকেই এই প্রজাতিটির সংকট হয় তীব্রতর। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ কোটি বছর ধরে টিকে থাকা উত্তরের সাদা গণ্ডার কেন সংকটের মুখে পড়লো? পড়লো কারণ গণ্ডারের শিং মানুষের গণ্ডার শিকারের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ালো। আফ্রিকায় নানা ধরণের লোক বিশ্বাসে গণ্ডারের শিং এর ব্যবহার হতো, পদমর্যাদার প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হতো শিং। এছাড়াও নানা প্রয়োজনে গণ্ডারের শিং ব্যবহারের তাগিদে ব্যপক পরিমানে শিকার করা হতো এই প্রজাতির গণ্ডার। ফলে সংকটে পড়ে প্রজাতিটি।
১৯৭০ সাল থেকে উত্তরের সাদা গণ্ডার সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয় চিড়িয়াখানায় রেখে। ‘৭০ সালেই উত্তরের সাদা গণ্ডারের এই প্রজাতির সংখ্যা ১০০০ থেকে ৭০০ তে নেমে আসে। ১৯৮০ র দশকে দেখা যায় প্রাকৃতিক অরণ্যে এই প্রজাতিটি টিকে আছে সংখ্যায় মাত্র ১৫টি। আরো প্রায় দুদশক পরে ২০০৬ এ এসে দেখা যায় সেই সংখ্যা আরো কমে দাঁড়ায় ৪ টিতে। ৪ জনের মধ্যে দুটি পুরুষ- সুনি আর সুদান। দুটি নারী – নাজিন আর ফাতু। ২০০৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের চিড়িয়াখানা থেকে ঐ ৪টি গন্ডার আফ্রিকায় ফিরিয়ে আনা হয়। আফ্রিকায় উত্তরের সাদা গণ্ডারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮টি। সবকটিই ছিলো চিড়িয়াখানায়। আশা ছিল এই ৮টি প্রজাতি পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে টিকে যাবে। রক্ষা পাবে প্রজাতিটি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। ২০১৮ র ১৯শে মার্চ মৃত্যু হয় শেষ পুং লিঙ্গের ‘উত্তরের সাদা গণ্ডারটির’- নাম সুদান। সুদানের এক চিড়িয়াখানায় জন্মেছিল বলেই এমন নাম। সুদানের দুই উত্তরাধিকরী নারী গণ্ডার বেঁচে আছে এখন- নাজিন আর ফাতু। বিলুপ্তির প্রহর গুনছে আফ্রিকার উত্তরের সাদা গণ্ডার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =