
পাহাড়ের কোলে প্রজাপতির বৈচিত্র বেশি। কিন্তু ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন প্রজাপতিকে সংকটে ফেলতে পারে। এও যেন এক ‘বাটারফ্লাই এফেক্ট’। ছোটখাটো ঘটনা বড় পরিবর্তন ডেকে আনে। বিপদ নেমে আসছে তাদের সাজানো সংসারে। প্রকাশিত গবেষণাটি জানাচ্ছে কীটপতঙ্গ বিষয়ক তথ্যের অভাবে, সংরক্ষণবিদ ও নীতিনির্ধারকরা এই সংকটের মোকাবিলা করতে বর্তমানে প্রস্তুত নয়। এই গবেষণার জন্য ইয়েলের বাস্তুতন্ত্রবিদ ওয়াল্টার জেটজ এবং জার্মানির মারবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ স্টিফান পিঙ্কার্ট এর নেতৃত্বে একটি দল ১২,০০০ এর বেশি প্রজাপতির তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা দেখতে পান, প্রজাপতির বৈচিত্র্য, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় পার্বত্য এলাকাতেই বেশি। এদের দুই-তৃতীয়াংশ প্রজাতি মূলত পর্বতেরই বাসিন্দা। নিম্নভূমির তুলনায় ৩.৫ গুণ বেশি প্রজাপতির আবাসস্থল পাহাড়ে। কিন্তু পার্বত্য বাস্তুতন্ত্রও, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত বদলাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ২০৭০ সালের মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে, উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের ৬৪% প্রজাপতির বসতি হারিয়ে যাবে। অপরদিকে, পার্বত্য অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ক্রমাগত নীচের দিকে। জেটজ বলেন, “প্রজাপতি কেবল দৃষ্টিসুখই দেয় না, গাছপালার সাথেও তারা সহ-বিবর্তিত হয়ে, পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে”। তবে দুঃখের কথা, আমাদের এই প্রথম বিশ্বজোড়া মূল্যায়ন থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রজাপতির এই বৈচিত্র্য এখন বিলুপ্তির ডাক দিচ্ছে। এই শতাব্দীতে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানের জীববৈচিত্র্য রক্ষার পরিকল্পনাগুলি প্রধানত প্রাণী ও গাছপালার দিকে নজর দিলেও, কীটপতঙ্গকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। বিজিসি সেন্টারের প্রাক্তন গবেষক পিঙ্কার্ট বলেন, “আমি জনসাধারণকে কীটপতঙ্গের বৈচিত্র্য রক্ষার উপায় সম্পর্কে জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ফলাফলগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক”। এতকাল কীটপতঙ্গের বৈচিত্র্য এবং বৈচিত্র্যের বিপদ ঘিরে কোনো বিশ্বব্যাপী মূল্যায়ন ছিল না। নতুন গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রজাপতির বৈচিত্র্য পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের তুলনায় ভিন্ন। যা ‘সংরক্ষণ পরিকল্পনা’গুলির প্রাসঙ্গিকতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। কীটপতঙ্গের জন্য জরুরি তথ্যের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে, এই গবেষণা মূলত ‘তথ্য সংগ্রহ’র জন্যই করা হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, প্রজাপতির আবাস ও অভিবাসন পথগুলিকে সংরক্ষণ করা গেলে, তবেই ভবিষ্যতে প্রজাপতির বৈচিত্র্য বজায় থাকবে, আশা করা যায়।