মহাজাগতিক আইনস্টাইন বলয়

মহাজাগতিক আইনস্টাইন বলয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ এপ্রিল, ২০২৫

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এক দুর্লভ ছবি পাঠিয়েছে। সে যেন এক মহাজাগতিক মরীচিকা। এটি ‘আইনস্টাইন বলয়’ নামে পরিচিত এক চমকপ্রদ মহাজাগতিক পরিঘটনা। প্রথম দেখলে মনে হবে, ছবিটা বুঝি একটা বিদঘুটে চেহারার গ্যালাক্সির। কিন্তু আসলে ওটা দুই বহু দূরবর্তী গ্যালাক্সির ছবি। অপেক্ষাকৃত কাছের গ্যালাক্সিটা রয়েছে ছবির কেন্দ্রে; আর দূরের গ্যালাক্সি থেকে আলো এসে বেঁকে বেঁকে তার চারপাশে একটা জ্বলজ্বলে বলয় তৈরি করেছে। এরই নাম আইনস্টাইন বলয়। অভিকর্ষীয় লেন্স-ক্রিয়া নামে কথিত এক প্রক্রিয়ায় এই কাণ্ডটা ঘটে। দূর থেকে আসা আলো একটা ভারী বস্তুর অভিকর্ষের টানে বেঁকে যায়। এর কারণ হল, আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী, দেশকাল ভরের টানে বেঁকে যায় আর আলো সেই বাঁকা পথ অনুসরণ করে। এই বক্রতা এতই সূক্ষ্ম যে দৈনন্দিনের মাত্রায় সেটা ধরা পড়ে না। কিন্তু মহাকাশের বৃহৎ মাত্রায় একটা গ্যালাক্সির আলো যখন অন্য একটা গ্যালাক্সি কিংবা গ্যালাক্সি-পুঞ্জর পাশ দিয়ে যায়, তখন এটা একেবারে নাটকীয় রূপ ধারণ করে। দূরের পটভূমিতে থাকা ওই গ্যালাক্সি আর দর্শক যখন প্রায় নিখুঁত সোজা লাইনে থাকে, তখন লেন্স ক্রিয়ার দৌলতে আলোর একটা প্রায় নিখুঁত বৃত্ত তৈরি হয়। এরই নাম আইনস্টাইন বলয়। লাইনটা যত নিখুঁত হবে, বৃত্তটাও তত নিখুঁত হবে। এক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। এটা খুবই বিরল ঘটনা। এ যেন এক মহাজাগতিক আতস কাচ। এমনিতে বহু দূরের যেসব ক্ষীণ গ্যালাক্সিগুলোকে দেখা যায় না, তারা এই অবস্থায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেই সুযোগে তাদের নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন।
আইনস্টাইন বলয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত এই লেন্স-গ্যালাক্সিটি ডিম্বাকার। এর উজ্জ্বল কেন্দ্রস্থল আর মসৃণ নির্বিশেষ চেহারা দেখলেই সেটা বোঝা যায়। যে-গ্যালাক্সি থেকে আলো এসে এই ডিম্বাকার গ্যালাক্সিটিকে মুড়ে রেখেছে সেটির আকৃতি একটি সর্পিল সিঁড়ির মতো। এর মধ্যে যেসব তারকাপুঞ্জ আর গ্যাস-কাঠামো রয়েছে সেগুলোকে বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।
বেলজিয়ামের লিয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গিলোম মাহ্‌লার-এর পরিচালনায় একটি সমীক্ষা দল এই ছবি সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এটি স্ট্রং লেন্সিং অ্যান্ড ক্লাস্টার ইভোলিউশন (স্লাইস) নামক এক আন্তর্জাতিক প্রকল্পর অঙ্গ। বিজ্ঞানীরা দেখতে চাইছেন, গত ৮০০ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্যালাক্সিগুলো কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে। এ জন্য তাঁরা ১৮২টি গ্যালাক্সিপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ করছেন। এ প্রকল্পে তাঁরা শুধু ওয়েব নয়, হাব্‌ল স্পেস টেলিস্কোপের ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩ এবং অ্যাডভান্সড ক্যামেরাও কাজে লাগিয়েছেন। ওয়েব টেলিস্কোপের পাঠানো এই ছবিটির দৌলতে এবার অভাবনীয় কিছু অনুপুঙ্খ দেখতে পাবেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + 20 =