
আমাদের সকলেরই জীবনে কিছু না কিছু কঠিন বা অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা ঘটে। তবে কিশোর বয়সে, এইধরণের অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের শ্বেতবস্তুর উপর প্রভাব হানে। মস্তিষ্কের শ্বেতবস্তুর যোগাযোগের মান ও পরিমাণ কমে যাবার সাথে এই অভিজ্ঞতাগুলির গভীর সম্পর্ক আছে। ‘ম্যাস জেনারেল ব্রিঘাম’ এর গবেষকরা এই যোগাযোগ হ্রাসকে, ‘জ্ঞানবুদ্ধির নিম্নস্তরের কার্যক্ষমতা’র জন্য দায়ী বলে মনে করেন। তবে, আশেপাশের পরিবেশে সংহতি ও ইতিবাচক অভিভাবকত্বের মতো কিছু সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা এক্ষেত্রে সুরক্ষা দেবার ভূমিকা নেয়। গবেষণাটি ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। মস্তিষ্কের শ্বেতবস্তু হল সেই যোগাযোগের পথ যা মস্তিষ্ক বর্তনীগুলির মধ্যে জ্ঞান ও আচরণ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাজগুলি করতে সাহায্য করে। এই পথগুলি শৈশবকালেই গড়ে ওঠে। তাই, শৈশবের অভিজ্ঞতা, মস্তিষ্কের শ্বেতবস্তুর পরিপক্কতায় পার্থক্য আনে। গবেষণার প্রধান লেখক সোফিয়া কারোজা এবং ব্রিঘাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের স্নায়ুতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অমর ধান্দ জানতে চেয়েছিলেন, শিশুরা কৈশোরকালে পৌঁছালে কিভাবে এই প্রক্রিয়া তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কারোজা বলেন, “আমাদের যা ধারণা তার চেয়ে অনেক বেশি করে এই শ্বেত বস্তুর ভিন্ন দিকগুলি, আমাদের প্রারম্ভিক জীবনের পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত। একটি বা দুটি পথ নয়, এই শ্বেতবস্তু মস্তিষ্কে অনেক বেশি জায়গা নিয়ে রয়েছে”।
এই গবেষণায় ৯,০৮২ শিশুকে নেওয়া হয়। প্রায় অর্ধেক অর্ধেক মেয়ে ও ছেলে। এদের গড় বয়স ৯.৫ বছর। গবেষকরা এদের বয়োসন্ধিকালীন মস্তিষ্কর জ্ঞানবুদ্ধি বিকাশ ঘটিত তথ্য বিশ্লেষণ করেন। তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও গঠন, জ্ঞানবুদ্ধিগত ক্ষমতা, পরিবেশ, মেজাজ ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাঁরা প্রারম্ভিক পরিবেশগত উপাদানের বিভিন্ন দিক দেখেন, যার মধ্যে জন্মপূর্ব ঝুঁকি, আন্তঃব্যক্তি বিপর্যয়, পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যা, প্রতিবেশী ঘটিত বিপর্যয় এবং সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা সবই রয়েছে। কারোজা এবং ধান্দ মস্তিষ্কের ডিফিউশন ইমেজিং স্ক্যানিং করেছেন। যায়নি। এটি শ্বেতবস্তু সংযোগগুলির অখণ্ডতা বোঝার একটি উপায়। তবে মস্তিষ্কের ছবিগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিনিধি। সময়ের সাথে তার পরিবর্তন অনুসরণ করা হয়নি। তারা এই শ্বেতবস্তু সংযোগগুলির শক্তি পরিমাপ করেন। পরে, তারা একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে দেখেছেন শিশুদের প্রারম্ভিক জীবনের পরিবেশের উপর ভিত্তি করে মস্তিষ্কের শ্বেতবস্তুর সংযোগগুলিতে বড় পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে, তাঁরা এমন কিছু অংশে শ্বেতবস্তু সংযোগের কম মান পেয়েছেন যা মানসিক অঙ্ক এবং ভাষার দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত। “আমাদের সম্পর্ক, গৃহজীবন, পাড়া প্রতিবেশি বা ঘটনাগুলি আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। এর ফলে, আমরা কীভাবে আচরণ করি তাতেও প্রভাব পড়ে,” কারোজা বলেন। বিশেষ করে শৈশবে।মানুষ যাতে সুস্থ গৃহজীবন পায়, সুস্থ মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য যা প্রয়োজনীয়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। এই গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, তাই এর সাথে জড়িত শক্তিশালী কারণগুলির সম্পর্ক স্থাপন করা এখনই সম্ভব নয়। ভবিষ্যতের গবেষণা সময়ের সাথে শিশুদের পর্যবেক্ষণ করা এবং নানা সময়ে মস্তিষ্কের তথ্য চিত্র সংগ্রহ করার উপর জোর দেবে।