নিজস্ব আণবিক সংবাদদাতা

নিজস্ব আণবিক সংবাদদাতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ক্রিস্টোফার ভয়েগ্‌ট-এর পরিচালনায় এম আইটি-র একদল ইঞ্জিনিয়ার এক অভিনব পদ্ধতি বার করেছেন যার সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া-কোষকে উদ্দীপিত করে তুলে অণু থেকে অনন্য একেকটি রঙ-মিশ্রণ নির্গত করা যায়। তাঁরা দু ধরণের ব্যাকটেরিয়ার উপর এমন সব কায়দাকৌশল করেছেন যে তারা সুনির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যর আলো উৎসারণে সক্ষম অণু উৎপাদন করতে পারে। বিশেষ ধরণের অতি-বর্ণালী ক্যামেরায় তার চিত্র ধরা পড়ে। এই অণুগুলিকে ‘সংবাদদাতা’ বলা চলে। এগুলি জিন ঘটিত বর্তনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাছাকাছি উপস্থিত অন্য ব্যাকটেরিয়ার খবর সেয়। ডক্টরোত্তর গবেষক ইয়োনাতান শেমলা জানিয়েছেন, যেকোনো সেন্সরে এটিকে চালানো বা বন্ধ করা যায়। নেচার বায়োটেকনলজি পত্রিকায় এই গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।
অতি-বর্ণালী ক্যামেরা ১৯৭০এর দশকেই উদ্ভাবিত হয়েছিল। তেজস্ক্রিয় ধাতু-নির্গত বিকিরণে ক্লোরোফিলের মধ্যে রঙের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পরিবর্তন মাপার জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। এই প্রকৌশলটিকেই তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন। এজন্য এঁরা কোয়ান্টাম গণনা কাজে লাগিয়ে প্রায় কুড়ি হাজার স্বাভাবিক কোষের অণুর নিজস্ব অতি-বর্ণালী স্বাক্ষর কেমন হবে তার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হন। এই স্বাক্ষরগুলি, নিঃসারিত আলোর নিজস্ব ছাঁদগুলিকে শনাক্ত করতে পারে। আরেকটি বড়ো ব্যাপার হল, ঠিক কতগুলি উৎসেচককে (এনজাইম) কৌশলে একটা কোষের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে কোষটি সংবাদদাতা অণু তৈরি করতে পারবে তার হিসেব। আদর্শ অণু সেটাই যেটা সবচেয়ে কম সংখ্যক উৎসেচক দিয়ে কাজ সারতে পারবে। গবেষকরা এইরকম দুটি ব্যাকটেরিয়ার জন্য দুটি অণু চিহ্ণিত করতে পেরেছেন। সিউডোমোনাস পুটিডা নামক মৃত্তিকা-ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিলিভার্ডিন, আর রুব্রিভিভ্যাক্স জিলেটিনোসাস নামক জল-ব্যাকটেরিয়ার জন্য এক ধরণের ব্যাকেটেরিও-ক্লোরোফিল। উভয় ক্ষেত্রেই তাঁরা সুকৌশলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উৎসেচককে দিয়ে সংবাদদাতা অণু বানিয়ে নিয়ে পোষক-কোষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। এবার এগুলিকে জিন-কৌশলে নির্মিত সেন্সর-বর্তনীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ২০ হাজারটি বিপাকীয় পদার্থর (মেটাবোলাইট) কোয়ান্টাম বলবৈজ্ঞানিক সিমুলেশন করে উপযুক্ত কয়েকটি সংবাদাদাতা অণু পাওয়া গেল। তা থেকে বাছাই করে নেওয়া হল একটি বিলিভার্ডিনকে, আর ব্যাকটেরিওফিলকে, যেহেতু এদের রঙ-শোষণ রেখা স্পষ্ট আর এরা জৈব সংশ্লেষণের উপযোগী। এই জিনগুলিকে এবর জল আর মাটির ওই দুই ব্যাকটেরিয়ার সেন্সর-বর্তনীর সঙ্গে যুক্ত করা হল। কোরাম সেন্সিং নামক এক বর্তনীতে এদের কাছাকাছি কোথাও অন্য ব্যাকটেরিয়া থাকলে এরা তাকে চিনতে পারবে। শুধু তাই নয়, এই সংবাদাদাতা অণুগুলিকে আর্সেনিক প্রমুখ ধাতুর সেন্সরের সঙ্গেও যুক্ত করা সম্ভব। বাকসোর মধ্যে সেন্সর ভরে সেগুলোকে চাষের ক্ষেতে, মরুভূমিতে, উঁচু উঁচু বাড়ির ছাদে রেখে পরীক্ষা করে দেখা গেল, কোষ থেকে নির্গত সংকেতগুলোকে ধরতে পারছে ড্রোনে চাপানো অতিবর্ণালী ক্যামেরা। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ক্যামেরাগুলো তাদের দৃষ্টি-ক্ষেত্রকে স্ক্যান করে নেয়। তারপর কম্পিউটার অ্যালগরিদ্‌মের সাহায্যে সংকেতগুলোকে বিশ্লেষণ করে অতিবর্ণালী সংবাদদাতারা হাজির আছে কি নেই তা দেখা হল। সর্বাধিক ৯০ মিটার দূরত্ব থেকে ছবি তোলা গেল। গবেষকদের ধারণা, কৃষি ছাড়াও পরিবেশের দূষণঘটিত সংকেত, সিমেন্ট-অবকাঠামোর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ফাটল এসবের হদিশ পাওয়া যাবে এর সাহায্যে।
সূত্র : ‘Scientists Engineer Bacteria to Produce Sensor Molecules That Can be Detected 90 Meters Away’
Genetic Engineering and Biotechnology News, 14 April , April 14, 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =