
মনে করুন, আয়না-ঘেরা একটা ঘরে দাঁড়িয়ে একটা টর্চ জ্বাললেন। আলো এদিক ওদিক থেকে ঠিকরে বেরিয়ে অনন্তকাল ছোটাছুটি করে চলবে। এই নীতির ভিত্তিতে ‘অপটিক্যাল ক্যাভিটি’ (আলো-গহ্বর) নামে এক ত্রিমাত্রিক কেলাস-গহ্বর তৈরি করেছেন রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দল। নেচার কমিউনিকেশন্স পত্রিকায় এর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। কোয়ান্টাম ভিত্তিক হরেক প্রযুক্তিতে কাজে লাগবে এটি।
কোয়ান্টাম আলো গহ্বর এমন এক বানানো কাঠামো যা বিভিন্ন প্রতিফলক তলের আলোকে ফাঁদে আটকে ফেলে, ফলত আলো বিভিন্ন ছাঁদে ঠিকরে ঠিকরে পড়ে। এই ছাঁদগুলোর রয়েছে আলাদা আলাদা কম্পাঙ্ক। এগুলোকে বলে ‘ক্যাভিটি মোড’। এদের কাজে লাগিয়ে আলোর সঙ্গে বস্তুর মিথস্ক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলা যায়। কোয়ান্টাম তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, অতি-সূক্ষ্ম লেজার আর সেন্সর নির্মাণ, উন্নততর ফোটন বর্তনী আর তন্তু-আলো জালিকা নির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। আলো-গহ্বর তৈরি করা কঠিন, তাই এর সরলতর একমাত্রিক কাঠামোগুলিই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল একটা জটিল গড়নের ত্রিমাত্রিক আলো-গহ্বর তৈরি করেছেন। সেটির সাহায্যে তাঁরা খুঁটিয়ে দেখেন একাধিক ক্যাভিটি মোড একটি স্থৈতিক চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে অবাধে চলমান ইলেকট্রনের পাতলা আস্তরণের সঙ্গে কীভাবে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটায়। তাঁদের মূল জিজ্ঞাস্য ছিল একাধিক ক্যাভিটি মোড যখন একই সঙ্গে অনেকগুলি ইলেকট্রনের সঙ্গে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটায় তখন কী ঘটে। একথা আমরা জানি যে ইলেকট্রনেরা নিজেদের মধ্যে জোরালো আন্তঃক্রিয়া ঘটায়, কিন্তু আলোকণারা (ফোটন) ঘটায় না। এই গহ্বরটি আলোকে বন্দি করে ফেলে, যার ফলে তড়িৎচুম্বক ক্ষেত্রগুলি খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর দরুন আলো আর বস্তুর মধ্যে এক গাঁটছড়া তৈরি হয়। আর তারই পরিণতিতে গড়ে ওঠে কোয়ান্টাম সুপারপোজিশন (দ্বৈতদশা) – যাদের বলা হয় পোলারিটন।
এই পোলারিটনকে আবার সংকর আলো-বস্তু দশাও বলা হয়। এরা একেবারে ক্ষুদ্র মাত্রায় আলোকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা পথ দেখায়। তার ফলে শক্তি-সাশ্রয়ী এবং দ্রুততর কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং কমিউনিকেশন প্রযুক্তি গড়ে তোলা সম্ভব। পোলারিটনরা যৌথভাবেও ক্রিয়া করে কোয়ান্টাম বিজড়িত দশা (এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট) তৈরি করতে পারে, যাকে আবার নতুন ধরণের কোয়ান্টাম বর্তনী আর সেন্সর তৈরির কাজে লাগানো সম্ভব। পোলারিটনে পরিণত হওয়ার এই প্রক্রিয়া অতি তীব্র হয়ে উঠলে তখন আলো আর বস্তুর মধ্যে শক্তি লেনদেন এত দ্রুত সম্পন্ন হয় যে ছড়িয়ে পড়ে অপচয় ঘটার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেই অবস্থাকে বলা হয় অতি-তীব্র গাঁটছড়া (আলট্রা স্ট্রং কাপলিং)। এটি আলো আর বস্তুর আন্তঃক্রিয়ার এক অস্বাভাবিক অবস্থা। কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের গবেষণায় এই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রটি এখন বিকশিত হয়ে চলেছে।