
চাঁদ নিয়ে এত যুগের এত কাব্য, ‘ও চাঁদ, সামলে রাখো জোছনাকে’ কিংবা ‘জাগে নাথ জ্যোৎস্নারাতে’ বলে এত বিহ্বলতার পর এখন জানা যাচ্ছে পৃথিবীর পরমাত্মীয় এই উপগ্রহটি যুগ যুগ ধরে আমাদের দিকে পাথরের চাঙড় ছুড়ে চলেছে, কিন্তু আমরা বিশেষ কিছুই টের পাইনি। এটা অবশ্য ঠিক, সে বেচারি নিজেও কিছু কম ঘা খায়নি। তার পিঠটা তো মহাকাশ থেকে আছড়ে-পড়া শিলায় ক্ষতবিক্ষত। সেইসব ক্ষতচিহ্ণ নিয়েও কত কাব্যি আমাদের। কখনো ওগুলোকে খরগোশ ভেবে চাঁদকে শশধর বলে কাছে টানি, কখনো মামা-ভাগ্নী সম্পর্ক পাতাই। বিজ্ঞানের কল্যাণে অবশ্য সেগুলোকেই খাতির করে চন্দ্রগহ্বর (ক্রেটার) নাম দিয়েছি আমরা। চেনবার সুবিধের জন্য বড়ো বড়ো বিজ্ঞানী মনীষীদের নামে নামও দিয়েছি। এই সেদিনও একটি গহ্বরকে শিশিরকুমার মিত্রর নামে চিহ্ণিত করা হয়েছে। চাঁদের পিঠে আছড়ে-পড়া এইসব প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাথরের ধাক্কা কখনো কখনো এতই জোরালো হয় যে তার ঠেলায় পাথরের কিছু খণ্ড চাঁদের পিঠ থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে। এতই তীব্র তার বেগ যে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ তার কাছে হার মানে। পাথরের খণ্ডগুলো চাঁদের আকর্ষণ কাটিয়ে মহাকাশে ঘুরতে থাকে। সাম্প্রতিক দুটি গবেষণায় দেখা গেছে এদের মধ্যে অনেকগুলোই ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের চক্করে পড়ে যায়।
একটি হিসেব বলছে, চাঁদ থেকে বেরিয়ে-আসা পাথরগুলোর ২৬% শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ঘাড়ে এসে পড়ে। চাঁদে ধাক্কা খাওয়ার পর এদের অর্ধেক সংখ্যক খণ্ড পৃথিবীতে এসে পৌঁছতে সময় লাগে দশ হাজার বছর। বাকি অর্ধেকটুকু এসে পৌঁছতে এক লাখ বছরও লাগতে পারে। গবেষণা থেকে আরও জানা যাচ্ছে, চাঁদ থেকে ঠিকরে-পড়া এইসব পদার্থ মূলত বিষুব অঞ্চলেই এসে পড়ে। আরেকটা অবাক-করা তথ্য এই যে, এগুলো নাকি ভোর ছ-টা কিংবা সন্ধে ছ-টা নাগাদই পৃথিবীর মাটিতে এসে আছাড় খায়।
আর বাকি যেসব প্রস্তরখণ্ড পৃথিবীতে এসে আছাড় খায় না, তাদের কী হয়? এইসব পুঁচকে খণ্ডগুলোকে আদর করে ‘মিনিচাঁদ’ ডাকনাম দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়ে গবেষণা করেছে অন্য একটি দল। অভিকর্ষর খামখেয়ালিপনায় এরা পৃথিবীর কক্ষপথে সাময়িকভাবে আটকে পড়ে। আগে মনে হত এরা বুঝি গ্রহাণু বেষ্টনী থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ওখানে আস্তানা গেড়েছে। কিন্তু এই গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে তা নয়, এরা অনেকেই খোদ চাঁদ থেকেই ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে। কেউ কেউ হয়তো চাঁদ থেকে ঠিকরে বেরোনো মাত্রই মিনিচাঁদে পরিণত হয়েছে, কেউ আবার আগে সূর্যর চারপাশে পাক খেয়ে এসে তারপর প্রতিবেশী পৃথিবীর কক্ষপথে ফিরেছে।
কেমন হয় এইসব মিনিচাঁদদের সঙ্গে আলাপ জমালে!
সূত্র: Spacing Out, Museum of Science, May 2, 2015, spacingout@e.mos.org