বিপন্নপ্রায় প্রজাতি সঙ্কট

বিপন্নপ্রায় প্রজাতি সঙ্কট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ মে, ২০২৫

সম্প্রতি এক নতুন মূল্যায়নে বিশ্বের সবথেকে বিপন্ন ২৫টি প্রাচীন প্রাইমেটদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু প্রজাতির সংখ্যা কয়েক শো থেকে কয়েক ডজনে নেমে এসেছে। খুব দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে তারা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
শতাধিক বিজ্ঞানীর একটি দল একটি দ্বিবার্ষিক তালিকা প্রস্তুত করেছেন।এই রিপোর্টটি আগের তালিকার ১৫টি নাম প্রতিস্থাপন করে সমানভাবে সংকটাপন্ন প্রজাতিগুলিকে তুলে ধরেছে। এশিয়া,আফ্রিকা, মাদাগাস্কার এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিপন্ন প্রাইমেটদের সম্পর্কে সতর্কতার বার্তা দিয়েছে।
এদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া এবং মাদাগাস্কার ৪টি নতুন তালিকাভুক্ত প্রজাতি এবং চীন, ভিয়েতনাম এবং নাইজেরিয়া ৩টি প্রজাতির আবাসস্থল । আবাসস্থল ধ্বংস ,শিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্য এদের বিলোপের প্রধান কারণ ।
ইতিহাসে নিবন্ধিত সবচেয়ে বিরল এপ প্রজাতি হল সুমাত্রার বাটাংটোরু বনাঞ্চলের তাপানুলি ওরাংওটাং। এদের বর্তমান সংখ্যা মাত্র ৭৬৭। গবেষকরা বলেন বন থেকে খনিজ আহরণ ও বাঁধ নির্মানের কারণে এরা বিলুপ্তপ্রায়।
পশ্চিম আফ্রিকার ক্রস রিভার গোরিলা আরও গভীর সংকটে রয়েছে।নাইজেরিয়া-ক্যামেরুন সীমান্তের ১১টি পাহাড়ি অঞ্চলে মাত্র ২৫০টিরও কম প্রাপ্তবয়স্ক গোরিলা বেঁচে আছে।এদের সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতেও নজরদারি করছে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীরও ক্ষতি স্থানীয় উন্নয়নের কয়েক বছরকে মুছে দিতে পারে।
মাদাগাস্কার বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বিপন্ন প্রাইমেটকে তালিকাভুক্ত করেছে। ম্যাডাম বার্থের মাউস লেমুরের ওজন মাত্র ৩০গ্রাম। বিগত দশকে এর সংখ্যা ৮০%এরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। কারণ তাদের বাসস্থান শুষ্ক বনাঞ্চলে ঝুম চাষ অঞ্চলটিকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে।
কিছু বিপন্ন প্রজাতি তালিকা থেকে বাদ পড়ায় তাদের নিরাপদ বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এরা পুনরায় সংকটের সম্মুখীন হতে পারে।যেমন চীন ও ভিয়েতনামের চুনাপাথরে বসবাসকারী কাও-ভিট গিবন। এরা এই বছর মানুষের আকর্ষন কেড়েছে। এদের সংখ্যা এখন ৯০টির কাছাকাছি অথচ এদের নিয়ে পূর্বে একাধিকবার গণনা করা হয়েছিল।
সুমাত্রায় উপগ্রহ চিত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে দেখা যায়,১৯৫৮থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ৫০০মিটার নীচের নিম্নবনভুমি অঞ্চল যা ওরাংওটাংদের প্রাচীন বাসস্থল সেটিও ৬০% কমেছে কৃষি, খনি ও বাঁধের বন রূপান্তরের ফলে। আবার, মাদাগাস্কারের মেনাব অঞ্চলে গাছের সংখ্যা ২০১২ সাল থেকে ৩০%এরও বেশি কমেছে যা লেমুরকে ঐ অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে।
শিকার এবং অবৈধ পাচারও প্রবল আঘাত হানছে। যেমন তরুন তাপানুলিও ওরাংওটাংদের অবৈধ ব্যবসায়ীরা পোষ্য হিসেবে বানিজ্য করবে বলে নিয়ে যাচ্ছে ,আরেকদিকে প্রাপ্তবয়স্করা ফাঁদে পড়ে মারা যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনও এই সংকটের অন্যতম কারণ। শক্তিশালী ঝড় উপকূলীয় বনকে ধ্বংস করে যা ইতিমধ্যে গিবন ও লেমুরের বাসস্থানের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে এড়ানোর জন্য সরকারকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণমূলক আইনগুলোকে আরও কঠোর করতে হবে, ভূমি দখল বন্ধ করতে হবে এবং অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী নিয়ে বানিজ্য আটকাতে হবে।
বিপন্ন প্রাণীদের নিয়ে অনুসন্ধানকারীরা আশা রাখেন যে, সংরক্ষন এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও এদের ভারসাম্য আনতে পারে।উদাহরণ স্বরূপ আমরা দেখি চীন ও ভিয়েতনামের উদ্যোগে কাও-ভিট গিবনের জন্য দুটি সংরক্ষিত বন তৈরি করা হয়েছে।আবার, নাইজেরিয়ায় দেখা গেছে বন সংরক্ষণ করে ও ফাঁদ সরিয়ে ফেলার ফলে গরিলারা আবার বংশবৃদ্ধ্বি করছে।
এই বিপন্নদের সংরক্ষণে সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও তার যথাযথ প্রয়োগ ভবিষ্যতে একটা ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + two =