জাপানে ভূমি-উত্থান

জাপানে ভূমি-উত্থান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ মে, ২০২৫

জাপানে ১৬ ফুট ভূমি-উত্থানের কারণ কী? ভূমিকম্পে চ্যুতির জ্যামিতিক তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জাপানের নোতো উপদ্বীপের ভূমিকম্পের মাত্রার একটি আন্দাজ তৈরি করেন এবং ব্যাখ্যা করেন কেন বিভিন্ন স্থানে ভূমির উত্থান এত চরমভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
২০২৪ সালের নববর্ষের দিনে উত্তর মধ্য জাপানের নোতো উপদ্বীপে ৭.৫ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যার ফলে ভূমির আকস্মিক উত্থান হয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এটি পৃথিবীর ভূত্বকীয় প্লেট চলাচলের কারণে ঘটে, যার ফলে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, ভূমিকম্পের ফলে বিভিন্ন স্থানে ভূমি উত্থানের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কিছু জায়গায় পাঁচ মিটার (১৬.৪ ফুট) পর্যন্ত উত্থান ঘটেছে, অন্য জায়গাগুলিতে তুলনামূলকভাবে কম।
গবেষকরা পূর্ববর্তী গবেষণা এবং ঘটনার আগে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ভূমিকম্পের একটি সিমুলেশন মডেল তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছিলেন । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল- চ্যুতির বৈশিষ্ট্য , চ্যুতির জ্যামিতিক গঠন ,চ্যুতির আকার, অভিমুখ, কোণ (ডিপ এবং স্ট্রাইক হিসাবে পরিচিত) এবং গতির অভিমুখ (স্লিপ)। বিজ্ঞানীদের আশা ছিল এই বিষয় নিয়ে মডেলটি ভুমিকম্পীয় গতিবিদ্যাকে প্রভাবিত করবে।
অবশেষে , ভূমিকম্পের আচরণকে চ্যুতি রেখা কীভাবে প্রভাবিত করছে সেটা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা চ্যুতি গঠনের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছেন যা সুপার কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে ভূমিকম্পের গতিবিধি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে যে নোতো উপদ্বীপের ভূমিকম্পে প্রধানত তিনটি ভূ-গর্ভস্থ চ্যুতি যুক্ত ছিল। এগুলি সংযোগকারী চ্যুতি নামে পরিচিত অর্থাৎ এগুলি বিপরীত পার্শ্বীয় গতিবিধির সাথে যুক্ত চুতি। এই তিনটি চ্যুতি অঞ্চল হল – মনজেন চ্যুতি, হকু গান চ্যুতি যা দক্ষিণ পূর্ব দিকে ঢালু এবং তৃতীয়টি হল টয়ামা ট্রাফ সাই এন চ্যুতি যা উত্তর পশ্চিম দিকে ঢালু । সুপার কম্পিউটারের সিমুলেশন থেকে বেরিয়ে এসেছে যে ভূমিকম্পের উত্থান ও সমতলচ্যুতি বরাবর স্থানচুতি, মূলত ভূত্বকীয় চাপের সাথে চ্যুতির আকৃতি ও অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল।
গবেষকরা ভাবছেন কীভাবে মডেলটিকে ভবিষ্যতের ভূমিকম্পের জন্য আরো উন্নত গতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই গবেষণা চ্যুতির জ্যামিতিক মডেলের মাধ্যমে সিমুলেশনের সম্ভাবনা প্রদর্শন করে।
গবেষণাটি দেখিয়েছে কিভাবে ফল্ট স্লিপ প্যাটার্ন-এর বৈশিষ্ট্যগুলো বড় ভূমিকম্প ঘটার আগে নির্ধারণ করা যেতে পারে। গবেষকরা আশা রাখেন এই গবেষণা বিভিন্ন উন্নত পদ্ধতি তৈরিতে সহায়ক হবে যা ভবিষ্যতের বড় ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট বিপদ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − six =