
বহুকাল আগে শোনা গানের একটা কলি হঠাৎ শুনেই আপনার পুরো গানটা মনে পড়ে গেল! কী করে হয় এমনটা?
স্যান্টা বারবারার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র-ইঞ্জিনিয়ারিঙের প্রফেসর ফ্রাঞ্চেস্কো বুল্লো জানাচ্ছেন, “এটা একটা সংযোগ-জালের কীর্তি”। একটা জিনিসের অনুষঙ্গে আরেকটা জিনিসকে মনে রাখার নাম “অনুষঙ্গাত্মক স্মৃতি”। এই অনুষঙ্গাত্মক স্মৃতি কোনো একক মস্তিষ্ক কোষে ধরা থাকে না। স্মৃতি ধরে রাখা আর স্মৃতি উদ্ধার করা দুটোই হল গতিশীল প্রক্রিয়া, যা নিউরনদের গোটা সংযোগজাল জুড়ে ক্রিয়াশীল। হপফিল্ড নেটওয়ার্ক নামক প্রচলিত একটি মডেল দিয়ে এর কিছুটা হলেও সবটা ব্যাখ্যা করা যায় না। বুল্লো এবং পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর তিন সহযোগী (সিমোনে বেত্তেতি, গিয়াকোমো বাজ্জো, সান্দ্রো জাম্পিয়ারি) এর একটা উন্নততর মডেল পেশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, যেভাবে আমরা এই জগত সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করি সেটা বহুল পরিমাণে বিরামহীন একটা প্রক্রিয়া, সেটা কোনো চটজলদি ব্যাপার নয়। সেটা ঠিক কম্পিউটারের মতো কাজ করে না। সুতরাং তাঁরা এমন একটা স্মৃতি মডেল নিয়ে কাজ করছেন যার একটা মানবীয় পরিপ্রেক্ষিত আছে।
মূল প্রশ্নটা হল, চারপাশের জগত থেকে গৃহীত অভিজ্ঞতার সংকেতগুলো কীভাবে আমাদের স্মৃতি পুনরুদ্ধারে সক্ষম করে তোলে? হপফিল্ডের ধারণা অনুযায়ী স্মৃতি পুনরুদ্ধার যেন একটা ‘শক্তি-ভূচিত্র’। সেখানে শক্তির নিম্নতম স্তরগুলো হল উপত্যকা, যা স্মৃতির প্রতিনিধি। স্মৃতি পুনরুদ্ধার মানে ওই ভূচিত্র অনুসন্ধান করে বেড়ানো। যখনই আপনি একটা কোনো উপত্যকার খাদে পড়ে গেলেন, অমনি আপনার স্মৃতি শনাক্তকরণ ঘটল। এই ভূচিত্রের সূচনাবিন্দুটি হল আপনার প্রারম্ভিক দশা। ধরা যাক, আপনি গোটা বেড়ালের বদলে কেবল তার ল্যাজটুকু দেখলেন। অনুষঙ্গাত্মক স্মৃতিতন্ত্রের সাহায্যে আপনি পুরো বেড়ালের স্মৃতিটা ফুটিয়ে তুললেন। হপফিল্ডের মডেল অনুযায়ী পুরো ‘বেড়াল-উপত্যকার’ খুব কাছে পৌঁছেনোর জন্য ওই ল্যাজের ডগার উদ্দীপনাটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন: ওই উদ্দীপনাটা আপনার এল কোথা থেকে? স্নায়ু-সক্রিয়তার যে-পরিসরে আপনি স্মৃতিগুলোকে সঞ্চয় করে রেখেছেন সেখানে আপনি পৌঁছচ্ছেন কী করে? হপফিল্ডের মডেল থেকে এর খুব স্পষ্ট উত্তর মেলে না।
বুল্লা এবং তাঁর সহযোগীরা বাইরে থেকে আসা তথ্য-চালিত নমনীয়তার একটা মডেল তৈরি করে এই অস্পষ্টতা দূর করার চেষ্টা করেছেন। এখানে প্রক্রিয়াটা ক্রমে ক্রমে পুরোনো আর নতুন তথ্যকে সম্মিলিত করে স্মৃতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটাকে সঠিক স্মৃতির অভিমুখে চালিত করে। এই মডেলে একটি বহিরাগত তথ্য-চালিত গতিশীল প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে বেড়ালের ল্যাজের ডগার চিত্ররূপটা হল বাইরের জগত থেকে আসা একটা উদ্দীপনা, যা শক্তি ভূচিত্রটিকে সরল করে তোলে। আপনার প্রারম্ভিক দশা যাই হোক না কেন, আপনি শেষ পর্যন্ত ওই বেড়ালের সঠিক স্মৃতিতে পৌঁছে যাবেন। শুধু তাই নয়, এই নতুন মডেলটি বাইরে থেকে আসা অবান্তর, অস্পষ্ট কিংবা দ্ব্যর্থব্যঞ্জক তথ্যগুলিকে আটকে দিতে পারে, এমনকি তাদের কাজে লাগিয়ে কম স্থিতিশীল স্মৃতিগুলিকে ছেঁকে বারও করে দিতে পারে।
বুল্লা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, কোনো একটা দৃশ্যর দিকে তাকালে আপনার নজর অনেকগুলি দৃশ্য-ক্ষেত্রর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। প্রত্যেক মুহূর্তেই আপনি বেছে নেন তার মধ্যে কোনটির প্রতি আপনি দৃষ্টি নিবদ্ধ করবেন। কিন্তু একাজে আপনার বাধা হয় চারপাশের অবান্তর অনেক কিছু। যেই আপনি বহিরাগত তথ্য-উদ্দীপনাটিকে আঁকড়ে ধরলেন, অমনি পুরো সংযোগ-জালটি আপনার অগ্রাধিকার অনুযায়ী নিজেকে বদলে নেবে। কোন উদ্দীপনাটিকে আপনি বেছে নেবেন তারই নাম হল মনোযোগ। প্রফেসর বুল্লার মতে, তাঁদের উদ্ভাবিত এই নতুন মডেলটি আলাদা লক্ষ্য নিয়ে খুবই স্বতন্ত্র এক সূচনাবিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করেছে বটে, কিন্তু ভবিষ্যতের নানাবিধ শিক্ষণ মডেলের নকশা নির্মাণের কাজে এর প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র : University of California – Santa Barbara. “Energy and memory: A new neural network paradigm.” ScienceDaily. ScienceDaily, 14 May 2025. <www.sciencedaily.com/releases/2025/05/250514164320.htm>.