ইয়েলোস্টোনের দৈত্যাকার ভাইরাস

ইয়েলোস্টোনের দৈত্যাকার ভাইরাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ মে, ২০২৫

ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের গরম প্রস্রবণগুলিতে আবিষ্কৃত বিশাল ভাইরাসগুলির সাথে পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তির ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার সম্ভাব্যতা রয়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা।
ইয়েলোস্টোনের উষ্ণ জলকুণ্ডগুলো তাদের রঙ ও তাপের জন্য দর্শকদের আকর্ষণ করে, কিন্তু অণু জীববিশেষজ্ঞদের কাছে ধরা দেয় জীবনের অন্য রহস্য। তাঁরা মনে করেন এটি এমন একটি স্থান, যেখানে হয়তো জীবনের প্রথম স্পন্দন দেখা দিয়েছিল দৈত্যাকার ভাইরাস রূপে।
পার্কের একটি গরম,আম্লিক খাল লেমনেড ক্রিক সর্বদা ১১২ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় বয়ে চলে । এটি এমন কিছু অপ্রত্যাশিত অণু জৈবিক দৈত্যদের প্রকাশ করেছে, যারা সম্ভবত বিবর্তনকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। গবেষকরা এখানে বিশাল ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন, যেগুলি ব্যাকটেরিয়া ও শৈবালের মতো অন্যান্য প্রাণীদের সাথে জিন বিনিময় করতে পারে। ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে, তাঁরা ৩,৭০০ ভাইরাস খন্ড শনাক্ত করেছেন, যার মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিশাল ভাইরাস শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
এই বিশাল ভাইরাসগুলি সম্ভবত প্রাচীন কাল থেকে এখানে বিদ্যমান ছিল এবং জীবনের প্রথম পর্যায়ের বাস্তুতন্ত্র গঠনে ভূমিকা পালন করেছিল। কিছু ভাইরাস জীবাণু থেকে জিন সংগ্রহ করে সেগুলি শৈবাল বা অন্যান্য প্রাণীদের দেহে সরবরাহ করে, যা তাদের দীর্ঘকাল টিকে থাকতে সহায়তা করে।
এই দৈত্যাকার ভাইরাসগুলো প্রথম ইউক্যারিওটদের(আধুনিক জীব) সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছিল বলে মনে হয়—তারা জিন অদল-বদল করত, পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করত এবং দুর্গম অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও এখানেই বসবাস করত।
শুধু দৈত্যাকার ভাইরাসই এই পার্কের একমাত্র বিস্ময়ের বিষয় নয়। বিজ্ঞানী জর্জ রাইস এবং মার্ক ইয়ং মিডওয়ে উষ্ণপ্রস্রবণে তাপপ্রেমী আর্কিয়া-র মতো আরেকটি ভাইরাসকেও দেখেছেন। আর্কিয়া হল একটি তাপপ্রেমী ভাইরাস যা ১৫৮°F থেকে ১৯৭°F তাপমাত্রায় এবং সর্বনিম্ন pH মান ১- এ বিকশিত হয়।তাঁরা এখন পর্যন্ত ৫,০০০- এরও বেশি পরিচিত ভাইরাসের মধ্যে মাত্র ৩৬ টি এই ভাইরাস খুঁজে পেয়েছেন।
ইয়েলোস্টোনের এক সাধারণ খাল থেকে শুরু হওয়া কাহিনী জীবনের প্রথমদিকের ছবিকে আরও প্রসারিত করে এবং দেখায় যে প্রতিটি উষ্ণ জলের ফোঁটা একটি অনন্য জীবকুলকে আশ্রয় দেয়। প্রতিটি আবিষ্কার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বাষ্পের নিচে আরও কত কিছু অপেক্ষা করছে।
এই আবিষ্কার শুধু প্রাচীন জীববিদ্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং মহাকাশে প্রাণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও দিকনির্দেশনা দিতে পারে। বিশাল ভাইরাসের জিন স্থানান্তর করার দক্ষতা মহাকাশবিজ্ঞানীদের জন্য আকর্ষক হতে পারে, কারণ এটি বিভিন্ন পরিবেশে জীবন খুঁজে পাওয়ার নতুন উপায়ের ইঙ্গিত দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =