হাঙর-কঙ্কাল থেকে নতুন প্রযুক্তি

হাঙর-কঙ্কাল থেকে নতুন প্রযুক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ মে, ২০২৫

৪৫০ কোটি বছর ধরে সমুদ্রে হাঙরেরা সাঁতার কাটছে। তাদের কঙ্কাল হাড়সর্বস্ব নয় বরং খনিজ-সমৃদ্ধ তরুণাস্থির উপর নির্ভরশীল। এই কাঠামো কেবল একটি অবলম্বন নয়, এটি একটি জীবন্ত যন্ত্র, একটি প্রাকৃতিক স্প্রিং যা প্রতিটি লেজের ঝাপটায় শক্তি সঞ্চয় করে আবার সেই শক্তিকে মুক্ত করে। ফ্লোরিডা আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইলেকট্রন সিনক্রোট্রন, এবং NOAA ফিশারিজের গবেষকরা ব্ল্যাকটিপ হাঙরের কশেরুকার অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ত্রিমাত্রিক গঠন বিচার করে দেখেন। এর জন্য তারা সিনক্রোট্রন এক্স-রে এবং ন্যানোটোমোগ্রাফি ব্যবহার করেন। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, হাঙরের কঙ্কালের দুটি স্তর – একটি বাইরের শক্ত খোল (কর্পাস ক্যালকেরিয়াম) এবং অন্যটি অভ্যন্তরীণ নরম কেন্দ্র। উভয় অঞ্চলই কোলাজেন নামক ফাইবারে পরিপূর্ণ। যার মধ্যে সূচের মতো বায়ো বা জৈব অ্যাপ্যাটাইট (প্রাকৃতিক খনিজ যা প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেটের একটি রূপ) মিশ্রিত। গবেষক মার্ক বলেন, “এই কৌশলটি চিংড়ি, ক্রাস্টেসিয়ান এবং এমনকি মানুষের মতো প্রাণীদের শক্ত, স্থিতিস্থাপক কঙ্কাল তৈরি করতে সাহায্য করে”। এটি একটি নির্দিষ্ট বিন্যাসে এমন ভাবে সাজানো, যাতে এটি একদিকে হাঙ্গরের কঙ্কালকে কঠিন এবং নমনীয় অথচ শক্তিশালী রাখে। এছাড়াও, জোড়া সাপের মতো প্যাঁচানো ফাইবার স্তরগুলি ফাটল প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং চাপ বিতরণ করে। এই কাঠামো হাঙরের জন্য অপরিহার্য কারণ তারা প্রতি ঘন্টায় হাজার হাজার বার শরীরকে বাঁকায়।
এই গবেষণা কেবল জীববিজ্ঞানের জন্য নয়, প্রযুক্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। হাঙরের এই ‘শার্কিটেকচার’ হালকা খোল , সাঁজোয়া বা বর্ম থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদী হাড়ের সংযোগ স্থাপন পর্যন্ত সবকিছুর বিকাশে সহায়তা করতে পারে। প্রকৃতি আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে শক্তি, নমনীয়তা এবং ক্ষতি সহনশীলতার সমন্বয় সাধন করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =