
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন যে, চাঁদের চুম্বকত্ব কোথায় গেল? এই রহস্যের সূচনা হয়েছিল যখন কক্ষপথে ঘোরা মহাকাশযান চাঁদের পৃষ্ঠের শিলায় উচ্চ চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব শনাক্ত করে। অথচ আজকের চাঁদের নিজস্ব কোনো স্থায়ী চুম্বকত্ব নেই। এম আই টির বিজ্ঞানীরা এর সম্ভাব্য একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তারা প্রস্তাব করেন যে প্রাচীনকালে চাঁদে একটি দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্র ছিল, যা একটি বৃহৎ প্লাজমা-সৃষ্ট ধাক্কা খেয়ে সাময়িকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই ক্ষেত্রটি চাঁদের দূরবর্তী পাশে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল।
গবেষকরা দেখিয়েছেন যে কোনো বৃহৎ উল্কাপিণ্ডের সংঘর্ষ চাঁদের চারপাশে আয়নিত কণার একটি প্লাজমা মেঘ তৈরি করতে পারে। এই প্লাজমা চাঁদের চারদিকে প্রবাহিত হয়ে মূল সংঘর্ষস্থলের বিপরীত দিকে জমা হয়েছিল। সেই স্থানেই প্লাজমা চাঁদের দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে ক্রিয়া ঘটিয়ে সেটির সাময়িক বৃদ্ধি ঘটিয়েছিল। ঐ অঞ্চলের শিলাগুলোর মধ্যে এই শক্তিশালী চুম্বকত্বের চিহ্ন থেকে যেতে পারে।
এই ঘটনাগুলোর সমন্বয় চাঁদের দূরবর্তী পাশে অত্যন্ত চৌম্বক শিলার উপস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারে। বিশেষত, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর নিকটে পাওয়া উচ্চ চৌম্বক ক্ষেত্রের শিলা এই ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলে যায়। গবেষকরা সন্দেহ করেন যে ইমব্রিয়াম বেসিন নির্মাণকারী বিশাল সংঘর্ষই সম্ভবত প্লাজমা মেঘ সৃষ্টি করেছিল, যা তাদের সিমুলেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিমুলেশন থেকে বোঝা যায় যে সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন প্লাজমার কিছু অংশ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে, বাকিটা চাঁদের চারপাশে প্রবাহিত হয়ে বিপরীত দিকে কেন্দ্রীভূত হয়। এটি চাঁদের চৌম্বক ক্ষেত্রকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বাড়িয়ে তোলে, যা প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী ছিল। গবেষকরা মনে করেন যে , এই স্বল্প সময়ের চৌম্বক ক্ষেত্র উচ্চমাত্রার চৌম্বক শিলা তৈরি করতে যথেষ্ট ছিল।
এই গবেষণা চাঁদের চুম্বকত্বের ব্যাখ্যা প্রদানের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর নিকটবর্তী অঞ্চলে সরাসরি শিলার নমুনা সংগ্রহ করে এই অনুমান যাচাই করা সম্ভব। নাসার আর্টেমিস মিশন এই অঞ্চলে অনুসন্ধান চালানোর পরিকল্পনা করছে, যা এই গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।