মহাবিশ্বে মায়া মরীচিকা

মহাবিশ্বে মায়া মরীচিকা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ জুন, ২০২৫

হয়তো আমরা একা নই। হয়তো অন্য কোথাও কোনো ভিনগ্রহে, অন্য কারও বাড়ি রয়েছে! এই নিয়ে এপ্রিলের এক ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়া জুড়ে। তোলপাড় বিজ্ঞানী মহল। এক দূরবর্তী গ্রহ, K2-18b, যার অবস্থান পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে, তার বায়ুমণ্ডলে ধরা পড়েছে ডাইমিথাইল সালফাইড। এ এমন এক অণু যা পৃথিবীতে কেবলমাত্র জীবন্ত প্রাণীই তৈরি করতে পারে। তাহলে কি… ? না, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, কল্পনা ছাড়ো! এটা হয়তো ‘স্রেফ একটি সাধারণ গ্যাসের বাজে কাকতালীয় সংকেত’ -প্রাণের কোনও ইঙ্গিত নয়। “আমরা যতটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশি গোলমাল। প্রমাণ খুবই কম। যে অণুটি দেখা গেছে, তার পরিচয় নিয়ে আমরা এখনো অন্ধকারে।” বললেন রাফায়েল লুক, ইউশিকাগোর সংশ্লিষ্ট প্রধান গবেষক ।
K2-18b-কে সরাসরি দেখা অসম্ভব। তাই বিজ্ঞানীরা নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে তার আলো বিশ্লেষণ করেন। সেই আলো, গ্রহের বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে আসে আর তার পথের বাঁকে বাঁকে অণুগুলো আলোর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে নিয়ে প্রতিফলিত করে। আর সেখান থেকেই তাঁদের কৌতুহল জাগে : গ্রহের হাওয়ায় কী ভাসছে? তবে এই সংকেত একা ডাইমিথাইল সালফাইডের নয়। হাইড্রোজেন আর কার্বনের সম্পর্ক মানেই হাজারো যৌগ, হাজারো বিভ্রান্তি। “তিনটে হাইড্রোজেন আর একটা কার্বন থাকলেই এমন সংকেত পাওয়া যায়,” বলেন সহ-গবেষক মাইকেল ঝাং। “তাহলে কোনটা ঠিক? এলিয়েনের নিঃশ্বাস? না কি নেপচুনের মতনই কোনও গ্যাস”? পর্যবেক্ষণ আর বিশ্লেষণ একত্র করে আরও একটি যুক্তি উঠে আসে: ইথেন গ্যাসও একই রকম সংকেত দিতে পারে। বহু গ্রহের পরিবেশে তা পাওয়া যায়, অথচ তা জীবনধারণের চিহ্নবাহক একেবারেই নয়। গবেষক ক্যারোলিন পিয়াউলেট-ঘোরাইব জানান, “আমরা সাধারণ ব্যাখ্যাগুলোকে নাকচ না করে কখনোই অসাধারণ তত্ত্বে যাই না।” তাই সেই ব্যাকরণ অনুযায়ী এর সবচেয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা হতে পারে- ইথেন। হাবল এবং ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহটিকে একাধিকবার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ডাইমিথাইল সালফাইডের সংকেত ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ ভিনগ্রহী নয়, এটি ছিল মহাজাগতিক অলীক দর্শন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − eight =