মেগালোডনের বিচিত্র খাদ্যাভ্যাস

মেগালোডনের বিচিত্র খাদ্যাভ্যাস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ জুন, ২০২৫

ওটোডাস মেগালোডন পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাংসাশী হাঙর । এটি প্রায় ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতো। ট্রলারযুক্ত একটি ট্রাকের চেয়ে এটি দীর্ঘ ছিল এবং ওজনে প্রায় দ্বিগুণ। চোয়ালে বসানো ছিল ত্রিভুজ আকৃতির দাঁত, যা মানুষের একটি হাতের আকারের মতো বড়, এবং এর কামড় ছিল শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হাইড্রলিক প্রেস যন্ত্রের দেওয়া চাপের মতো শক্তিশালী। এটি ৩ মিলিয়ন বছর আগে পর্যন্ত বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে সাঁতার কাটত। প্রায়ই শিকারের খোঁজে থাকত তার বিশাল আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্যালোরির চাহিদা মেটাতে। অনুমান করা যায় , এর প্রতিদিন প্রায় ১লক্ষ কিলোক্যালোরি প্রয়োজন হতো। শুধু বড় শিকারি প্রানীই নয়, এরা খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন স্তরের সামুদ্রিক প্রাণী খেয়েছে বলে নতুন গবেষণায় জানা গেছে। আগে ধারণা করা হতো যে, এই বিশাল হাঙরটি প্রধানত তিমির মতো সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদেরই খেত। কিন্তু জিঙ্ক আইসোটোপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, মেগালোডন ছিল বহুভোজী শিকারী।

জার্মানি, ফ্রান্স,অস্ট্রিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের সাথে কাজ করে গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞান বিভাগের ডঃ জেরেমি ম্যাককরম্যাক দাঁতের জীবাশ্মে থাকা জিঙ্কের আইসোটোপ বিশ্লেষণ করেছেন। দাঁতে থাকা হালকা আইসোটোপ(Zn64) ও ভারী আইসোটোপ (Zn66)- এর অনুপাত দেখে বোঝা যায় প্রাণীটি খাদ্যশৃঙ্খলের কোন স্তরে ছিল । মাছ খাওয়া প্রাণীদের শরীরে তুলনামূলকভাবে কম Zn66 জমা হয় আর যারা শিকার করে , তাদের শরীরে আরও কম । এ দেখেই গবেষকরা বোঝেন , মেগালোডন ও তার নিকট আত্মীয় ওটো ডাস চুবুতেনসিস-এর স্থান ছিল খাদ্যশৃঙ্খলের ওপরের স্তরে।

যেহেতু সেই সময় খাদ্যশৃঙ্খলের নীচের স্তরে জিঙ্ক(Zn) আইসোটোপের অনুপাত কেমন ছিল তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না , তাই গবেষকরা বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক ও বর্তমানের হাঙর প্রজাতির দাঁতের তুলনা করেছেন। দাঁত সংগ্রহ করা হয়েছে মূলত জার্মানির সিগম্যারিংগেন ও পাসাউ অঞ্চল থেকে, যেখানে ১৮ মিলিয়ন বছর আগে ২০০ মিটার গভীর এক উপসাগর ছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, সেসময় খাদ্যশৃঙ্খলের নীচের পর্যায়ে ছিল সি-ব্রিম মাছ , যারা ঝিনুক ও শামুক খেত । মাঝারি স্তরে ছিল ছোটো ছোটো হাঙর ও তিমি – যাৱা ডলফিনের পুর্বপুরুষ।এর উপরে ছিল বড়ো হাঙর যেমন- স্যান্ড টাইগার হাঙর। একদম শীর্ষে ছিল বিশাল হাঙর আড়ালোসেলাচুস চুস্পাইডেটাস এবং ওটো ডাস প্রজাতির হাঙর। এই মেগালোডনরা শুধু শীর্ষ খাদক ছিল তা নয়, প্রয়োজনে খাদ্যশৃঙ্খলের নীচের স্তরের প্রাণীও খেত। বিশেষ করে পাসাউ অঞ্চলের দাঁত বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন সেখানকার মেগালোডনরা নীচের স্তরের খাদ্যই বেশি খেত , যা স্থানীয় খাদ্য প্রাপ্যতার বা সময়ভেদে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

জিঙ্ক আইসোটোপ বিশ্লেষণ একটি নতুন গবেষণার ক্ষেত্র হলেও, এটি প্রাচীন হাঙর, তিমি এমনকি তৃণভোজী গণ্ডারদের জীবনধারাও বুঝতে সাহায্য করছে। গবেষণাটি শুধু অতীতের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বোঝাতেই নয়, বরং মনে করিয়ে দেয় যে বিশাল শিকারী প্রাণীরাও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায় না। যেমন পূর্বের আরও এক গবেষণায় দেখা গেছে আধুনিক গ্রেট হোয়াইট হাঙরের উত্থান মেগালোডনের বিলুপ্তির একটি কারণ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − five =