
মহাকাশে জীবন বিজ্ঞানীদের বরাবরই আকর্ষণ করেছে। তবে খুব কমই কেউ আশা করেছিলেন এমন একটি জীবাণুর সন্ধান পাবেন যা আগে কখনো পৃথিবীতে দেখা যায়নি।“ নিয়ালিয়া তিয়াংগোঙ্গেনসিস” নামে একটি ব্যাকটেরিয়া চীনের তিয়াংগোং মহাকাশ স্টেশনে পাওয়া গেছে, যা বিজ্ঞানীদের কৌতূহল ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ব্যাকটেরিয়াটি শনাক্ত করেছেন বেইজিংয়ের শেনঝো স্পেস বায়োটেকনোলজি গ্রুপের ড. জুনজিয়া ইয়ুয়ান, যিনি জিনগত ও জৈব-রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটির অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক গবেষণায় জানা গেছে, এই অতি ক্ষুদ্র জীবটি মহাকাশের নিম্ন মাধ্যাকর্ষণ ও উচ্চ বিকিরণে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম। শুধু তাই নয় এরা উচ্চ তেজস্ক্রিয় পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। এটি কীভাবে মহাকাশের কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিয়াংগোং স্টেশনে জীবাণুর উপস্থিতি নিয়ে ২০২৩ সালের মে মাসে চীনের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল, মহাকাশে ব্যাকটেরিয়া কীভাবে আচরণ করে এবং দুর্বল মহাকর্ষের প্রভাব তাদের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করে কিনা তা খতিয়ে দেখা।
নিয়ালিয়া তিয়াংগোঙ্গেনসিস অতি ক্ষুদ্র এবং দণ্ডাকৃতি। তবে এটাই একমাত্র বিশেষ গুণ নয়। এরা রেণু বা স্পোর তৈরি করতে পারে, যা কঠিন পরিবেশে জীবাণুর বেঁচে থাকার জন্য সহায়ক। এরা জিলেটিনের মতো থকথকে পদার্থকেও ভাঙতে পারে এক বিশেষ পদ্ধতিতে, যা পুষ্টিহীন পরিবেশে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। এরা প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো তৈরি করতে পারে, যা এদের মানসিক চাপ প্রতিরোধী হিসেবে গড়ে তোলে।
এই ব্যাকটেরিয়াটি নিয়ালিয়া সারকুলানস নামের আরেকটি পরিচিত প্রজাতির সঙ্গে জিনগতভাবে সম্পর্কিত, যেটি দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে তিয়াংগোং স্টেশনে পাওয়া প্রজাতিটি কতটা বিপদজনক, তা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। অনুমান করা হচ্ছে, এই ব্যাকটেরিয়া শুধু স্বাস্থ্যর নয়, বরং মহাকাশযানের যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি করার সম্ভাবনা রাখে। এরা গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে যন্ত্রপাতির উপর জমে গিয়ে তাদের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন, এটি মহাকাশেই জন্ম নিয়েছে, না কি পৃথিবী থেকে এসে সেখানে পরিবর্তিত হয়েছে। এর শক্তিশালী প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে এটি কক্ষপথে কয়েক সপ্তাহের বেশিই বেঁচে থাকতে পারে। এই অনিশ্চয়তা মহাকাশের জৈববৈচিত্র্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে। আরও ভালো শনাক্তকরণ সরঞ্জাম এবং উন্নত জিন সিকোয়েনসিং বিজ্ঞানীদের নবাগতকে চিহ্নিত করার পরে দ্রুত কাজ করতে সহায়তা করবে। জীবাণুটি আক্রমণাত্মক বা ক্ষতিকারক হয়ে উঠলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সমস্যাগুলি রোধ করতে পারবে। মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে, জীবাণুঘটিত চমক ও ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য আরও গবেষণা এবং উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন।