
কীভাবে, কোথা থেকে, কবে ফুল ফুটল এই পৃথিবীতে? হাজারো জীবাশ্ম ঘেঁটে, ইতিহাস খুঁড়ে, বিজ্ঞান একগুঁয়েভাবে পেছনে ছুটেছে সেই প্রশ্নের। এমনকি ডারউইনের চোখে এ ছিল এক ‘ ভয়ানক রহস্য ’। এর সন্ধানে বেরিয়ে জার্মানির হ্যানোভার লিবনিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক খুঁজে পান ১২৩ মিলিয়ন বছর আগের পর্তুগালের লুসিটানিয়ান অববাহিকার মাত্র চারটি পরাগরেণু। যা ধুলোর চেয়েও ক্ষুদ্র, বাতাসের তুলনায় হালকা। যার গায়ে খোদাই করা আছে এক প্রাচীন গোপন বার্তা-তিনটি সূক্ষ্ম খাঁজ, যাকে বলে তিন ভাঁজওয়ালা রেণু। এটা দিয়েই উদ্ভিদের বিবর্তন আবার নতুন খাতে লেখা শুরু হয়ে যায়। এই পরাগরেণুর বৈশিষ্ট্য আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী গাছেদের জনক ইউডিকটসের স্বাক্ষর, যাদের আজ আমরা সূর্যমুখী, গোলাপ কিংবা টমেটো রূপে চিনি। তারা প্রথম এসেছিল আজ থেকে ১২১ মিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু এই নতুন নমুনার বয়স অন্তত ১২৩ মিলিয়ন বছর। মাত্র দুই মিলিয়নের ব্যবধান! তবু বিবর্তনের মাপকাঠিতে এটি এক বিশাল লাফ। এই চারটি পরাগরেণু যেন এক জীবাশ্মগ্রন্থের পৃষ্ঠা, যার প্রতিটি রেখায় লেখা রয়েছে, পৃথিবীর প্রাচীনতম ফুল কোনটি? কোথা থেকে তার যাত্রা শুরু? এই আবিষ্কারের ভিত শুধু জীববিজ্ঞানের সৌন্দর্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানীরা স্ক্যান করেন পলি স্তরের প্রাচীন ইতিহাস। ব্যবহার করেন উচ্চ-রেজোলিউশনযুক্ত লেজার মাইক্রোস্কোপি। পরাগের গায়ে থাকা ত্রিখাঁজ চিহ্ন শুধু গাছের পরিচয় নয়। বরং এটিই প্রমাণ যে সেই উদ্ভিদ ছিল প্রকৃত ফুলের পূর্বপুরুষ। তবে, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বর তো প্রয়োজন হয় যাচাইয়ের। এখানেই আসে আরেক খেলা। সমুদ্রের কবচ জীবাশ্ম । এই খোলসগুলি প্রাচীন সাগরের রাসায়নিক স্বাক্ষর- স্ট্রনশিয়াম আইসোটোপ। এদের অনুপাত বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেন এক কালনির্ণয় চিহ্ন। নিশ্চিত করেন, প্রাপ্ত পলি স্তরটি ১২৩ মিলিয়ন বছরেরই পুরোনো। এই ফুলের উৎসস্থল আর্দ্র কিংবা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য নয়। বরং মধ্য-অক্ষাংশে থাকা এক তুলনামূলক শীতল ভূখণ্ড। অর্থাৎ, উদ্ভিদরা সম্ভবত অনেক বেশি অভিযাত্রাশীল। ফুলগুলো শুধু গ্রীষ্মমণ্ডলেই বাসা বাঁধেনি, বরং তারা ঠান্ডা ঋতুভিত্তিক জলবায়ুতেও পাড়ি দিয়েছে। যদি তারা এত আগে এবং এত বহুমুখী পরিবেশে বিস্তার করতে পেরে থাকে, তাহলে হয়ত ফুলের এই চমকপ্রদ সফলতা আরও দ্রুত ঘটেছিল। তাহলে এখন কি আমরা বলতে পারি ফুলের বিবর্তনের ছকটা আমরা আদৌ বুঝে উঠেছি?