
২০২৫ সালের মে মাসে চারজন ব্রিটিশ পর্বতারোহী ইতিহাস গড়লেন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে, তবে একবারে ভিন্ন এক পদ্ধ্বতিতে , জেনন গ্যাসের সাহায্যে ।অস্ট্রিয়ার অভিযান সংস্থা ফার্টেনবাখ অ্যাডভেঞ্চারস-এর কর্মকর্তা লুকাস ফার্টেনবাখ জানান এই প্রথমবারের মতো পর্বতারোহীরা জেনন(xe) গ্যাস ব্যবহার করলেন উচ্চ স্থানে অভিযোজন ছাড়াই সফলভাবে পর্বত জয় করার জন্য।
সাধারণত পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত( মাউন্ট এভারেস্ট) আরোহণের আগে পর্বতারোহীদের দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস কাটাতে হয় উচ্চতায় দেহকে অভ্যস্ত করানোর জন্য। কারণ উচ্চতা যত বাড়ে অক্সিজেনের ঘনত্ব তত কমে , যা শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। কিন্তু ব্রিটেনের এই গবেষক দলটি জেনন গ্যাস সেবন করায় দেহে এমন এক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা তাদের উচ্চ স্থানে প্রতিকূলতার সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। দেখা যায়, তারা লন্ডন থেকে রওনা দিয়ে মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছে যান। পর্বতারোহীরা উচ্চতার উপযোগী বাড়িতেই তৈরী বিশেষ তাঁবুতে ঘুমাতেন, যা তাদের শারীরিকভাবে বেশি উচ্চতার আবহিক অভ্যস্তকরণে সাহায্য করেছিল। পর্বতারোহনণের সময় অন্যদের মতো তারাও অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেন।
জেনন(xe) একটি গন্ধহীন ও বর্ণহীন নিষ্ক্রিয় গ্যাস যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে খুব সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়।এটি মূলত চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেহ অসাড় করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ফার্টেনবাখ জানান , এই গ্যাস হাইপক্সিয়া( অক্সিজেনের অভাবজনিত সমস্যা) থেকে রক্ষা করে এবং অ্যাক্রোফোবিয়া ( উচ্চতাজনিত ভীতি) থেকে বাঁচায়। ফলে অভিযানটি দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হয়। কিছু পথনির্দেশক পূর্বে এটি ব্যবহার করলেও, সাধারণ পর্বতারোহীদের মধ্যে এই প্রথমবার জেনন গ্যাসের প্রয়োগ হলো। ফার্টেনবাখের এই পদ্ধতি শুধু সময় ও শারীরিক ঝুঁকি কমায় না বরং পরিবেশগত ভাবেও ইতিবাচক। কারণ ছোট অভিযানে কম রসদ, কম আবর্জনা ও কম মানববর্জ্য তৈরী হয়, যা হিমালয়ের সংবেদনশীল পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক।
তবে এই নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি নিয়ে সকলেই একমত নন। মার্কিন অভিযানকারী ও অ্যাল্পেনগ্লো এক্সপিডিসন কোম্পানির পথনির্দেশক অ্যাড্রিয়ান বালিঙ্গার পর্বত আরোহণে জেননের ব্যবহারকে দৃষ্টি আকর্ষণকারী চমক বলেই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা সেই ধরণের কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতাই নয় যেটা তারা দিতে চান।
তাঁর মতে প্রত্যেকেরই পর্বত বিজয় এমন ভাবেই হওয়া উচিত , যা তাদের গর্বিত করে। যদি ব্রিটিশদলটি তাদের এই পদ্ধতিতে গর্বিত হয় সেটা তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ।
এই বছরের মার্চ থেকে মে মাসের পর্বত আরোহণের মরশুমে নেপাল সরকার মোট ৪৬৮ জনকে এভারেস্টে ওঠার অনুমতি দিয়েছে , ইতিমধ্যে ২০০ জনের বেশি শীর্ষে পৌঁছেও গেছেন।
জেনন গ্যাসের এই ব্যবহার পর্বতারোহণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলো বলেই মনে করেছেন কেউ কেউ, যদিও এ নিয়ে বিতর্কও কম নয়।