
সমুদ্রের নীচে, আমাদের চোখের আড়ালে, ছোট ছোট এককোষী জীবেরা প্রতিদিন এক বড় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই এককোষী জীব ‘প্ল্যাঙ্কটন’ নামে পরিচিত। এরা এতটাই ছোট যে খালি চোখে এদের অনেকসময় দেখাও যায় না। অথচ এরাই সমুদ্রের জীবজগৎ তথা পৃথিবীর বাতাসে অক্সিজেন আর জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম প্রধান শক্তি। আজ এই প্ল্যাঙ্কটনরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর জলবায়ু বদলাচ্ছে। সমুদ্রের জল গরম হচ্ছে, পুষ্টির পরিমাণ কমছে, সাথে সাথে জলের রাসায়নিক গঠনও বদলে যাচ্ছে। এই বদলে যাওয়া পরিবেশে টিকে থাকতে গিয়ে প্ল্যাঙ্কটনদেরও নিজের শরীরের ভিতরের গঠন বদলাতে হচ্ছে। এই বদলই তাদের বেঁচে থাকার কৌশল। গবেষকরা দেখেছেন, প্ল্যাঙ্কটনগুলি তাদের কোষের বাইরের ঝিল্লি বা আবরণে থাকা চর্বির (লিপিড) গঠন বদলে নিচ্ছে। ঠান্ডা জলে নমনীয় থাকার জন্য তারা এক রকম চর্বি ব্যবহার করে, আবার গরম জলে শক্ত থাকার জন্য তারা আরেক রকম চর্বি তৈরি করে। এভাবেই তারা কোষের গঠন বদলে টিকে থাকার লড়াই চালায়। জলে পুষ্টির পরিমাণ কমে গেলেও তারা এক অনন্য পথ বাতলে নেয়। সাধারণত কোষ গঠনে ফসফরাস দরকার হয়। এই ফসফরাসের ঘাটতি তারা অন্য রাসায়নিক দিয়ে পূরণ করছে। এই পরিবর্তনগুলো খুবই সূক্ষ্ম, কিন্তু জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা প্রধান ড. ওয়েইমিন লিউ বলেন, “আমরা এমন অনেক কৌশল খুঁজে পেয়েছি যেগুলো আগে জানা ছিল না। এই ছোটো ছোটো প্রাণীগুলো কত অসাধারণ ক্ষমতা রাখে, সেটা দেখে আমরা বিস্মিত! ” প্ল্যাঙ্কটনদের এই পরিবর্তন, কেবল তাদের ক্ষেত্রেই নয় বরং গোটা সমুদ্র জুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে! ছোট মাছ থেকে শুরু করে বিশাল তিমি, সবাই কোনো না কোনোভাবে এই প্ল্যাঙ্কটনের উপরেই নির্ভরশীল। যদি প্ল্যাঙ্কটনের গঠন বা ধরন বদলে যায়, তাহলে খাদ্য- শৃঙ্খলায় গোলযোগ দেখা দিতে পারে! কিছু প্রাণী হয়তো সংখ্যায় মাথা চাড়া দেবে, আবার কিছু অতলে হারিয়ে যাবে। আরও বড় বিষয় হল প্ল্যাঙ্কটনগুলি বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। তারা যদি ঠিকমতো কাজ করতে না পারে, তাহলে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বাড়বে, পৃথিবী আরও গরম হবে। এই গবেষণা শুধু প্ল্যাঙ্কটনের আচরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জলবায়ু কেমন হতে পারে তারও আভাস দেয়। ড. লিউ বলেন,”প্ল্যাঙ্কটন না থাকলে সমুদ্রের জীবন চলবে না। ওদের বাঁচাতে না পারলে সঙ্গে আমাদেরও বিপদে পড়তে হবে!” সবশেষে বলা যায়, অতি ক্ষুদ্র জীবও যে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে, ‘প্ল্যাঙ্কটন’ তার আদর্শ প্রমাণ। এদের রক্ষা করার অর্থ আমাদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা।