কোষের মৃত্যু বা নেক্রোসিস

কোষের মৃত্যু বা নেক্রোসিস

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ জুন, ২০২৫

২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউ সি এল) এক নতুন গবেষণা বলছে, নেক্রোসিস নামক অপ্রত্যাশিত কোষ-মৃত্যুর প্রক্রিয়াটি মানুষের বার্ধক্য, রোগ, এমনকি মহাকাশ ভ্রমণের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।এই গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত একটি প্রচেষ্টা। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার অংকোজিন জার্নালে।

নেক্রোসিস এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোষ হঠাৎ করে মারা যায়, সাধারণত সংক্রমণ, আঘাত বা রোগের কারণে। এটি নিয়ন্ত্রিত কোষ-মৃত্যুর (যেমন- অ্যাপোপটোসিস) মতো উপকারী নয়, বরং এটি অপ্রতিরোধ্য ও ধ্বংসাত্মক। এর ফলে আশেপাশের কোষ ও কলা ( সম বা ভিন্ন একাধিক কোষের সমন্বয়) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষকরা বলছেন, নেক্রোসিস শুধুমাত্র একটি কোষের মৃত্যু নয়, বরং তা একটি “চেইন রিঅ্যাকশন”(ধারাবাহিক বিক্রিয়া মালা) যা বার্ধক্য ও বহু রোগের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।নেক্রোসিস প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছে ক্যালসিয়াম। সাধারণত কোষের বাইরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ভিতরের চেয়ে দশ হাজার থেকে এক লাখ গুণ বেশি থাকে। যখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন ক্যালসিয়াম হঠাৎ করে কোষে প্রবেশ করে এবং সেটিকে বিশৃঙ্খল করে ফেলে, ফলে কোষ ফেটে যায় ও বিষাক্ত পদার্থ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে প্রদাহ ও টিস্যু ক্ষয় হয় এবং রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষ করে কিডনিতে নেক্রোসিসের প্রভাব মারাত্মক। বয়স ৭৫ বছর হলে প্রায় অর্ধেক মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। গবেষণায় বলা হয়েছে, কিডনির ব্যর্থতার নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ নেই। অক্সিজেনের অভাব, প্রদাহ, টক্সিন(অধিবিষ) জমে যাওয়া, সবকিছু মিলেই নেক্রোসিস ঘটে। এটি এক ধরণের “পজিটিভ ফিডব্যাক লুপ”। এ একটি প্রাথমিক ঘটনা বা প্রক্রিয়া যা অন্য একটি প্রক্রিয়া বা ঘটনাকে উৎসাহিত করে এবং পুনরায় প্রথম প্রক্রিয়াটিকে আরও শক্তিশালী করে। এর ফলে কোষকলার ধ্বংস ত্বরান্বিত হয়।

মহাকাশ গবেষণাতেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মহাকাশচারীরা মহাকর্ষহীনতা এবং কসমিক রশ্মির প্রভাবে দ্রুত বার্ধক্য এবং কিডনি-সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগেন। ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে মানুষের কিডনি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। নেক্রোসিস রোধ করা গেলে এই সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হতে পারে। ড. ক্যারিনা কের্ন বলেন, “নেক্রোসিস অনেক রোগের মূল— ফুসফুস, কিডনি, লিভার, মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে।” তিনি আরও বলেন, “এই কোষ-মৃত্যুর ধারা থামাতে পারলে শুধু ক্ষয় বন্ধ নয়, বরং কোষ কলার পুনর্জন্মও সম্ভব হতে পারে।”সার্বিকভাবে গবেষকরা বলছেন, নেক্রোসিসকে নিশানা করে চিকিৎসা করা গেলে তা শুধু পৃথিবীতে বার্ধক্য ও রোগের বিরুদ্ধে নয়, বরং মানবজাতির মহাকাশ জয়েও এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + ten =