সমুদ্রস্রোতের উল্টো রথযাত্রা

সমুদ্রস্রোতের উল্টো রথযাত্রা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ জুন, ২০২৫

পৃথিবীর আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে এক নিঃশব্দ রথচালক কাজ করে চলেছে হাজার বছর ধরে। তার নাম অ্যামক (AMOC ), আটলান্টিক মহাসাগরের উল্টো স্রোতের সঞ্চালন ব্যবস্থা। এই সমুদ্রস্রোত গ্রীষ্মমণ্ডলের গরম জলকে উত্তরের দিকে নিয়ে যায় এবং বিপরীতে উত্তরের ঠান্ডা জলকে আবার দক্ষিণে ফেরত পাঠায়। এভাবেই পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে। ইউরোপ গরম থাকে, আমেরিকার পূর্ব উপকূল থাকে তুলনামূলক শান্ত। কিন্তু এই নিঃশব্দ চালক এখন হোঁচট খাচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। ফলে, গলে যাচ্ছে গ্রীনল্যান্ড ও সুমেরুর বরফের পাহাড়। সাগরে নামছে বিপুল পরিমাণ মিষ্টি জল। আর এই মিষ্টি জলই অ্যামকের বিরুদ্ধে এক বিপজ্জনক অস্ত্র। এই স্রোত ব্যবস্থার মূল শক্তিটাই আসে লবণাক্ততা এবং ঠান্ডা জলের ঘনত্ব থেকে। আর মিষ্টি জল সেটিকেই দুর্বল করে দিচ্ছে। এই দুর্বলতার প্রভাব শুধু উত্তর আটলান্টিকেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সরাসরি প্রভাব ফেলছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলেও। গবেষণায় উঠে এসেছে,অ্যামক দুর্বল হওয়ায় এই অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং উপকূলে আরও ঘনঘন ও ভয়ংকর বন্যা হচ্ছে। সুইডেনের গটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ ড. সেলিন হিউজে বলছেন, “এই গবেষণার ফলাফল আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। এই অঞ্চলের সমুদ্র বরফ কমে যাওয়া অ্যামক-কে পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে”। আরও উদ্বেগজনক কথা বলছেন এম আই টি এর সমুদ্রবিজ্ঞানী রাফায়েল ফেরারি। “এমন এক পতন হবে যা বিজ্ঞানীরা ‘জলবায়ু চরম মাত্রা ’ বলে অভিহিত করেন। ” অর্থাৎ হঠাৎ ও বিশাল এক পরিবর্তন, যার পর সবকিছু বদলে যাবে চিরতরে। যদি অ্যামক একেবারে থেমে যায়, তাহলে শুধু বন্যা নয়, ইউরোপে চরম শীত, আফ্রিকায় খরা, দক্ষিণ আমেরিকায় বৃষ্টির নকশা বদল সবকিছুই ঘটবে একযোগে। কেবল জলবায়ু বিপর্যয় নয়, এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতি, খাদ্য উৎপাদন এবং মানব বসতির ওপর।এই সংকট থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে এখনই নিয়ন্ত্রণে আনা। কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং সমুদ্রস্রোতের উপরে বিজ্ঞানসম্মত নজরদারি। এখন আর বিলাসিতার সময় নেই, দরকার জরুরি পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 1 =