
সম্প্রতি নিউরোলজিতে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে ,সাধারণ একটি জিনের পরিবর্তনের কারণে পুরুষদের জীবদ্দশায় ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নারীদের তুলনায় দ্বিগুণ।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে,ডিমেনশিয়া হল একটি মস্তিষ্কজনিত রোগ ,যার ফলে কোনো ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি, আচরণ এবং দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগ নয়, এটি বিভিন্ন ধরণের রোগের কারণে হয়ে থাকে।
এই গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল, বয়স্কদের জীবন কম ঘটনা সংকুল করে তোলার ব্যাপারে অ্যাসপিরিনের ভূমিকা সংক্রান্ত ট্রায়ালের তথ্য ব্যবহার করা। গবেষকরা দেখতে চাইছিলেন যে হেমোক্রোমাটোসিস (HFE) জিনের পরিবর্তিত রূপ যাদের রয়েছে, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে কিনা।কার্টিন মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক জন অলিনিক জানান, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের শরীরে H63D নামক জিনগত বিকল্পের একটি অনুলিপি থাকে, আর প্রতি ৩৬ জনে একজনের থাকে দুটি করে অনুলিপি। দেখা গেছে ,যারা দুটি অনুলিপি বহন করে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র পুরুষদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে, নারীদের মধ্যে এধরণের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
স্যার অলিনিকের মতে , যদিও এই জিনের বিকল্পটি অপরিবর্তনীয়, তবু মস্তিষ্কের যেসব অংশ এটির দ্বারা প্রভাবিত হয় সেটি লক্ষ্য করে চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা যেতে পারে। কেন এই জিনের বিকল্পটি শুধুমাত্র পুরুষদের ক্ষেত্রেই ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায় সেটি এখনও গবেষণাসাপেক্ষ বিষয়।HFE জিনটি সাধারণত পশ্চিমের দেশগুলোতে হেমোক্রোমাটোসিস (যে রোগে শরীর অতিরিক্ত আয়রন শোষণ করে) রোগ নির্ণয়ের সময় পরীক্ষা করা হয়। অধ্যাপক অলিনিক বলেন, এই গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী এই জিনের পরীক্ষাটি পুরুষদের মধ্যে আরও ব্যাপকভাবে চালু করা উচিত। কারণ গবেষণায় এমন কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি যা থেকে রক্তের আয়রনের মাত্রা ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক দেখা যায়। বরং এটি ইঙ্গিত দেয়, সম্ভবত প্রদাহ বা কোষের ক্ষয়জনিত মস্তিষ্কের আঘাত এ ঝুঁকি বাড়াতে পারে।সহ-গবেষক অধ্যাপক পল লাকাজ মনে করেন, এই ফলাফল ভবিষ্যতে ব্যক্তিবিশেষে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় চার লক্ষাধিক মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, যার এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ। এই গবেষণা অস্ট্রেলিয়ার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সফল যৌথ প্রচেষ্টার ফল।
এই গবেষণাটি একটি চমৎকার উদাহরণ যে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন গবেষণা দল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসঙ্গে কাজ করে এই ধরনের ক্রমশ বেড়ে চলা রোগ সম্পর্কে আরও জানতে পেরেছে যা শেষ পর্যন্ত সারা বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে।এই ট্রায়ালটি ছিল এমন যাতে অংশগ্রহণকারী এবং গবেষক কেউই জানেন না যে কে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা পাচ্ছে এবং কে মান্য চিকিৎসা পাচ্ছে। প্লাসিবো চিকিৎসার অর্থ হল আপাতদৃষ্টিতে একটি চিকিৎসাগত হস্তক্ষেপ বলে মনে হলেও এতে কোনও সক্রিয় উপাদান থাকে না বা প্রকৃত চিকিৎসাবিদ্যাগত প্রভাব থাকে না। যেমন চিনির বড়ি, স্যালাইন ইনজেকশন ইত্যাদি। যেখানে প্রতিদিন স্বল্প মাত্রার অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৯,১১৪ জন সুস্থ বয়স্ক মানুষের উপর।
মূলত প্রতিদিনের স্বল্প মাত্রার অ্যাসপিরিন ব্যবহারের ঝুঁকি বনাম উপকারিতা মূল্যায়নের জন্য এই গবেষণা করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সুস্থ বার্ধক্য সংক্রান্ত একটি বিশাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি হয়েছে যা বহু গবেষণার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।